প্রত্যাশার পাহাড়ে ফের সফর মমতার

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সফর। বাগডোগরায় নেমে রোহিণী হয়ে দার্জিলিং পৌঁছতে গড়পড়তা সোয়া দু’ঘণ্টা লাগে তাঁর। সোমবার লাগল প্রায় দ্বিগুণ সময়। কারণ, পথে কনভয়কে দাঁড়াতে হল আঠারো বার!

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৯
Share:

দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সফর। বাগডোগরায় নেমে রোহিণী হয়ে দার্জিলিং পৌঁছতে গড়পড়তা সোয়া দু’ঘণ্টা লাগে তাঁর। সোমবার লাগল প্রায় দ্বিগুণ সময়। কারণ, পথে কনভয়কে দাঁড়াতে হল আঠারো বার!

Advertisement

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর জন্য সমতলে শিলিগুড়ি থেকে জায়গায় জায়গায় ফুল-মালা আর খাদা হাতে মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতায়। কেউ আরও দাবি পূরণের প্রত্যাশায়। দীর্ঘদিন ঘরে আটকে থাকার পরে কেউ এসেছেন আশার আলো দেখতে।

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর বারবার এই সব প্রাপ্তি-প্রত্যাশার হাতে ছুঁয়ে দেখার জন্য দাঁড়াচ্ছেন। হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন উপহার। জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘অউর কেয়া চাহিয়ে (আর কী চাই)?’’ বলছেন, ‘‘পাহাড় আমার হৃদয়ে। পাহাড়ের জন্য আমি যথাসাধ্য করেছি। আরও করব। দার্জিলিঙের মুখের হাসি কোনও মূল্যেই আমি নষ্ট হতে দেব না।’’

Advertisement

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁর জন্য এই ঠেলাঠেলি-হুড়োহুড়ির খবর দফায় দফায় পৌঁছে যাচ্ছে সিংমারিতে, যেখানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দফতর। মোর্চা সূত্রের খবর, কোথায় কী হচ্ছে, তার খেয়াল রাখছিলেন জিএলপি-র সদস্যরা। বিমল গুরুঙ্গের নির্দেশেই। তাঁরা ক্রমাগত মোবাইলে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন নির্দেশিত জায়গায়। সেই তথ্য সিংমারিতে পৌঁছে যাচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গেই। সব দেখে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের একাংশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ছোটখাটো টেলি-কনফারেন্সও করে ফেলেন তাঁরা।

পাহাড়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মোর্চার নেতারা দিদির সঙ্গে দেখা করতে তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে তদ্বির শুরু করে দিয়েছেন। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি খোলাখুলিই বলেন, ‘‘দিদির সঙ্গে দেখা করতে চাই। অনেক কথা জমা রয়েছে। অনেক চাওয়া-পাওয়াও আছে।’’

বস্তুত, সব দিক থেকেই এটা চাওয়া-পাওয়ার পাহাড়। প্রাপ্তি-প্রত্যাশার এই দার্জিলিং সফরে এ দিন রোহিণীর কাছে মানববন্ধন করেন জিএনএলএফের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে তুমুল ভাবে পাল্লা দিয়েছে হরকা বাহাদুর ছেত্রীর দলবলও। ভোটে হেরে গেলেও হরকাকে সরকারি কমিটিতে পদ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পদ পেয়েছেন জিএনএলএফ প্রধান তথা সুবাস ঘিসিঙ্গের ছেলে মন ঘিসিঙ্গও। আগামী পুরসভা ও জিটিএ ভোটের আগে দুই নেতাই চাইছেন নিজেদের দর বাড়িয়ে রাখতে। তাই মানববন্ধনে ঠেলাঠেলি। তাই জিএনএলএফ নেতা নরবাহাদুর ছেত্রী বলেন, ‘‘আমাদের শক্তি যে পাহাড়ে কমেনি, সেটা দেখিয়ে দিলাম।’’ তাই অন্য দিকে হরকাও বলেন, ‘‘পাহাড় কী চায়, তা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে ভাল কেউ জানে না।’’

একদা পাহাড় দাপিয়ে বেড়াত মোর্চা। জিটিএ বা গোর্খা টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গড়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর দিকে মন দিয়েছিল। এখন সেই পাহাড়েই আরও সাতটি উন্নয়ন বোর্ড। প্রথমে লেপচা বোর্ড গড়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, তিনি পাহাড়ের প্রতিটি সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণে চেষ্টা করবেন। এর পরে গঠন হয় তামাঙ্গ, শেরপা, ভুটিয়া, মঙ্গর, লিম্বু ও রাই বোর্ড। প্রতিটি বোর্ডকে গড়ে ৫-১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে আবাসন, নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব দেন। তাতেই বোর্ডগুলির প্রত্যাশা বেড়েছে।

লেপচা, শেরপা ও ভুটিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যানরা আলাদা ভাবে বললেন, ‘‘আমরা এত দিন কিছুই পেতাম না। দিদি অনেক কিছুই দিয়েছেন। আশা করি, আরও দেবেন। ওঁকেও আমরা খালি হাতে ফেরাব না।’’

জিএনএলএফ, হরকার দলকে জোটসঙ্গী করলেও ক্রমে পাহাড়ে প্রধান শক্তি হতে চায় তৃণমূল। তাই মাটিগাড়া থেকে খাপরাইল হয়ে রোহিণীর পথে রাস্তার দুই ধারে বোর্ড প্রত্যাশী, জিএনএলএফ, হরকার দলের পতাকা দেখে দার্জিলিঙে তৃণমূল পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস খোঁজ নিতে থাকেন, ‘‘আমাদের লোক আছে তো সব জায়গায়!’’ তার পর দেখা গিয়েছে ঘাসফুল শোভিত পতাকা। দেখা গিয়েছে তৃণমূলেরও লোকজনকেও। স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে তৃণমূল শিবির।

সিংমারিতে মোর্চার সদর দফতরে তত ক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে বৈঠক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement