নরেন্দ্র মোদীর ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
এ বার ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার অঙ্গ হিসেবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক ও সর্বস্তরের শিক্ষাকর্মীদের প্রত্যেককে আজ, বৃহস্পতিবার ১০ হাজার পা হাঁটার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শুধু আজই নয়, এটাকে প্রতিদিনের জীবনচর্যার অঙ্গ করে নিতে বলা হয়েছে।
এই কর্মসূচি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘যাঁদের পরামর্শে শরীর ফিট রাখার জন্য এত উদ্যোগ, তাঁরা আগে নিজেদের মনের ফিটনেস ঠিক করুন। অসুস্থ গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে দেশবাসীকে শান্তি দিন।’’
আজ, বৃহস্পতিবারেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ শুরুর কথা ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই উপলক্ষে ইউজিসি সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, শিক্ষক ও কর্মীদের ১০ হাজার পা হাঁটার চেষ্টা করতে বলেছে। উপাচার্যদের কাছে ইউজিসি-র সচিব রজনীশ জৈনের পাঠানো চিঠিতে ১০ হাজার পা হাঁটার বিষয়টি প্রাত্যহিক অভ্যাসে আনতে বলা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ‘ফিটনেস প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে। খেলাধুলা, অনুশীলন, শারীরিক কসরতকে ওই কর্মসূচিতে আনতে বলা হয়েছে।
আনুমানিক হিসেবে ১০ হাজার পা হাঁটা মানে প্রায় আট কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করা। কতটা শারীরিক সক্ষমতা থাকলে প্রতিদিন সকলে হেঁটে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কারণ সকলের শরীর-স্বাস্থ্য সমান হয় না।
দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের মধ্যে যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন, মমতা তাঁদের অন্যতম। হাঁটা তাঁর দৈনন্দিন জীবনচর্যার অঙ্গ। মমতা বুধবার বলেন, ‘‘শরীরের সুস্থতার আগে দরকার মনের সুস্থতা। দেশের শাসককুলের মধ্যে এটারই এখন বড় অভাব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, মানুষ আগে মানসিক চাপ থেকে বাঁচুক। ‘‘দেশে গণতন্ত্র আজ অসুস্থ। কার্যত পরাধীনতা চলছে। যাঁদের নির্দেশে ১০ হাজার পা হাঁটার ফরমান জারি করা
হচ্ছে, সবার আগে তাঁরা দেশকে শান্তি দিন। সুস্থ গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিন। জনগণের মানসিক শান্তি ফিরিয়ে দিন। দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করুন,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইউজিসি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের’ সূচনা পর্ব দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হবে এবং সেটা বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখাতে হবে। এই উপলক্ষে ক্যাম্পাসে কী কী করা হল, তার ভিডিয়ো তৈরি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন এই অনুষ্ঠান দেখলেন, ইউজিসি-র ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ছবি, ভিডিয়ো-সহ তা আপলোড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অবশ্য এ বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বিদেশে। রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এ দিন জানান, তিনি এমন কোনও নির্দেশ পাননি। পেলে নিশ্চয়ই এই বিষয়ে পদক্ষেপের জন্য আলোচনা হত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস জানান, এমন কোনও কর্মসূচির সিদ্ধান্ত তাঁদের প্রতিষ্ঠানেও নেওয়া হয়নি। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী জানান, তাঁরা ইউজিসি-র নির্দেশ পালনের চেষ্টা করেন। তাঁদের ক্যাম্পাসে প্রত্যেকে রোজই অনেকটা করে হাঁটেন।