‘জয় শ্রীরাম’ শুনে ফের মেজাজ হারালেন মমতা। নিজস্ব চিত্র।
ফের জয় শ্রীরাম স্লোগান শুনে মেজাজ হারালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাড়ি থেকে নেমে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গেল তাঁকে। তাঁর গাড়িতে হামলার অভিযোগ তুলে মমতা পুলিশকে ঘরে ঘরে ঢুকে ‘নাকা চেকিং’-এর নির্দেশও দেন। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া-নৈহাটির এই ঘটনায় ফের সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
এ দিন নৈহাটিতে দলীয় ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচিতে দুপুর ১টা নাগাদ যাওয়ার কথা ছিল মমতার। কোনও কারণে তাঁর যেতে দেরি হয়। বিকেলের দিকে তিনি যখন ভাটপাড়ার রিলায়্যান্স জুটমিলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন রাস্তার ধার থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠে। মমতার অভিযোগ, এক দল লোক তাঁর গাড়ির উপর হামলা করে। তাঁর উদ্দেশে ভেসে আসে গালিগালাজ। এর পরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মমতা। তেড়ে যান ওই দলটির দিকে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের খাবে, আমাদের পরবে, আবার গন্ডগোল করবে! বেঁচে আছ আমাদের জন্য।’’ এর পরেই তিনি পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন, ‘‘সবার নাম নোট করে নিন। ঘরে ঘরে নাকা চেকিং করুন। যারা গন্ডগোল করেছে সবাইকে ধরো।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভাটপাড়ার ওই এলাকায় মূলত অবাঙালিদের সংখ্যাআধিক্য। মমতা চিৎকার চেঁচামেচি করে তাঁর গাড়িতে উঠতেই ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠে। গাড়ি থেকে আবারও নেমে আসেন তিনি, ‘‘আয় সামনে আয়। বুকের পাটা থাকলে সামনে এসে বল।’’ মমতার অভিযোগ, ‘‘স্লোগান দেবে দিক। সাহস কত, বিজেপির ফেট্টি বেঁধে আমাকে গালিগালাজ করছে, আমার গাড়িতে হামলা চালাচ্ছে! এদের আমরা যত্ন করে রেখে দিয়েছি। এরা আউট সাইডার। বাংলার স্থানীয় লোক নয়।’’ মমতার এই ‘আউট সাইডার’ মন্তব্য ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাদেশিকতার রাজনীতি করছেন।
একই ঘটনা ঘটেছে এ দিন নৈহাটির নদিয়া জুটমিলের সামনেও। ‘সত্যাগ্রহ’ মঞ্চে যাওয়ার পথে সেখানেও ক্ষুব্ধ মমতাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে দেখা যায়। গাড়ি থেকে নেমে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চামড়া গুটিয়ে ছেড়ে দেব। ডাকাত ক্রিমিনাল। সব তাড়িয়ে ছাড়ব।’’
আরও পড়ুন : বিজেপিকে আমি ঘৃণা করি, নৈহাটিতে বললেন মমতা
আরও পড়ুন : কেন ভারতকে নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড়লেন না মালালা?
নৈহাটির সভাতে পৌঁছেও মমতা এই প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটা জুটমিলের সামনে আমার গাড়ির উপর বিজেপির ফেট্টি বাঁধা কয়েক জন হামলা চালানোর চেষ্টা করে। যাদের আমরা খাওয়াই, পরাই, থাকতে দিই, ভালবাসি— তারাই এমন করছে!’’ তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর গাড়ির সামনে এসে হামলা চালানো হয়। এর পর তিনি বলেন, ‘‘গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকব। আমরা মোদীর দয়ায় বেঁচে নেই। মোদীর সরকার নির্বাচিত। আমারাও নির্বাচিত সরকার। এ সব মানব না।’’
এর আগে গত ৪ মে খড়্গপুর থেকে চন্দ্রকোনা-মেদিনীপুর সড়ক ধরে চন্দ্রকোনায় রোড শো করতে যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চন্দ্রকোনা ঢোকার মুখে রাধাবল্লভপুরে রাস্তায় কয়েকজন জয় শ্রীরাম স্লোগান দেয়। গাড়ি থামিয়ে সটান নেমে পড়েন মমতা। তারপর সুর চড়িয়ে বলেন, “এই পালিয়ে যাচ্ছিস কেন। সামনে আয়।”
মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো। মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রকোনা ছাড়ার আগেই তিন জনকে আটক করেছিল পুলিশ। তারপর থেকে বিজেপি-র প্রচারে ফিরে ফিরে এসেছে এই প্রসঙ্গ। খোদ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ সভা করতে এসে ওই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। অমিত শাহ তো ঘাটালের মঞ্চে প্রকাশ্যেই জয় শ্রীরাম শ্লোগান তুলে বলেছিলেন, “পারলে আমায় গ্রেফতার করুন।”
এ দিন ফের রাধাবল্লভপুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল নৈহাটি-ভাটপাড়ায়।