christmas

Mamata Banerjee: বো ব্যারাকে বড়দিন উৎসবের নির্দেশ মমতার

সোমবার বিকেলে বড়দিনের মরসুমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার এলেন কলকাতার ভিতরের এই কলকাতার কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

বো ব্যারাকে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মুখ্যমন্ত্রী আসছেন! বার্তাটা তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল এক দিন আগেই। সেই মতো বিকেল থেকে চুল বেঁধে সাদা শাড়িতে ফিটফাট হয়ে সেজেগুজে তৈরি এঞ্জেলা গোবিন্দরাজ। কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহল্লা বলে পরিচিত বৌবাজারের বো ব্যারাকের বাসিন্দাদের সমিতির তিনি সেক্রেটারি।

Advertisement

সোমবার বিকেলে বড়দিনের মরসুমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার এলেন কলকাতার ভিতরের এই কলকাতার কাছে। ঘিঞ্জি গলির মহল্লায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভিড় ঠেলাঠেলি হতে পারে ভেবে খানিক সঙ্কোচও মমতার। তাই শেষ মুহূর্তে তাঁর আসাটা প্রায় কেঁচে যাচ্ছিল। কিন্তু ওই তল্লাটের বাসিন্দাদের উৎসাহের কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী শেষমেশ ওই তল্লাটে যাওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রাখলেন। বেশিক্ষণ অবশ্য থাকেননি। টেনেটুনে মিনিট পাঁচেক। কিন্তু ওইটুকু সময়ই পারস্পরিক আন্তরিক সৌহার্দ্যের স্বাক্ষর হয়ে থাকল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার শতাব্দীপ্রাচীন লাল ইটের টুকটুকে বাড়িগুলোর মাঝের উঠোনে দাঁড়িয়েই মমতা এ দিন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে (ববি) একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন। পার্ক স্ট্রিটের ক্রিসমাস উৎসবের মতো বো ব্যারাককেও আগামী বছর থেকে কলকাতার বড়দিন-পার্বণে শরিক করতে হবে বলে মেয়রের উদ্দেশে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর। এই চত্বরের বিশিষ্ট চরিত্র অ্যানা চাও, ভ্যালেরি, গ্লেন্ডা রিজকুকদের সঙ্গে জোড় হাতে ‘হ্যাপি এক্সমাস’ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতেই তিনি বলেন, ‘‘পরের বছর থেকে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে এখানটাও থাকবে।’’ ববি-সহ অন্য পদাধিকারীদের বলেন, ‘‘তোমরা কিন্তু ভুলো না! আমি নানা কাজে থাকি। এটা আমায় মনে করাবে।’’

Advertisement

প্রবীণ বাসিন্দাদের মনে পড়ছিল, বহু বছর আগে বো ব্যারাকের এই চত্বরে দেখা মিলেছিল আর এক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর। তবে তিনি এসেছিলেন এখানকার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সিপিআইয়ের গীতা মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়দের কাছে। এ দিনই মিশনারিজ় অব চ্যারিটির প্রতি কেন্দ্রের বিরূপ আচরণের অভিযোগের পটভূমিতে বো ব্যারাকে মমতার সৌহার্দ্য-সফরে কেউ কেউ অন্য তাৎপর্যও দেখছেন। তবে বো ব্যারাকের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান হলেও সব মিলিয়ে এই পাড়াটি প্রায় এক ‘মিনি ইন্ডিয়া’-র ধাঁচে কলকাতার বিভিন্ন জাতধর্মের বাসিন্দাদের সহাবস্থানের স্মারক। দক্ষিণ ভারতীয় খ্রিস্টান এঞ্জেলা ছাড়া, নিরামিষাশী গুজরাতি আশিস শাহ, উর্দুভাষী মুসলিম আলাউদ্দিন, ভারতীয় চিনা রিচার্ড, মেদিনীপুরের বাঙালি ভগবৎ জানা— সকলেই বো ব্যারাকের বাসিন্দা। বড়দিনের আলোর সাজে রূপসী মহল্লায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমবার এসে খুব ভাল লাগছে।’’

এঞ্জেলা একটি বেতের ডালায় সাজিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি কেক, জিঞ্জার ওয়াইন, আঙুরের রসের ঘরোয়া ওয়াইন ইত্যাদি তুলে দিতে চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। তিনি বলেন, ‘‘এ সবই আমাদের ঘরের তৈরি।’’ মমতা অবশ্য কোনও উপহার নেননি। গাড়িতে ওঠার আগে উপহারে হাত ছুঁইয়ে বলেন, ‘‘আমিও তো আপনাদের ঘরের লোক, আমায় আবার কিসের উপহার!’’ স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে বাসিন্দারা মিলে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ছবি তোলারও হিড়িক পড়ে। ‘দিদি’-র গাড়ি বেরোনর সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা দুই সদ্য তরুণ ছেলেমেয়ে অ্যালমাস আলম এবং সেরেনা শিন মিলে স্লোগান তোলেন, ‘খেলা হবে!’ বাড়ির দুয়ারে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোলাকাত কারই বা ঘটে সচরাচর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement