সিকিমের বন্যা নিয়ে চিন্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পায়ের চোটের জন্য বাড়িবন্দি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতেই তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘‘সব ছুটি বাতিল।’’ বাড়ির চৌহদ্দিতে থাকলেও তিনি নিজে দিনে ২৪ ঘণ্টা সমস্ত প্রশাসনিক কাজ সামলাবেন। সেই সঙ্গে রাজ্যে জরুরি পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক বিভাগগুলিতেও ছুটি বাতিল হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
বুধবার ভোরেই মেঘভাঙা বৃষ্টিতে হ্রদ ফেটে ভেসে গিয়েছে উত্তর সিকিম। বিপদ এড়াতে সিকিমের বাঁধ থেকে জল ছাড়া হয়েছিল। সেই জলের স্রোতে এক লহমায় ১৫-২০ ফুট জলস্তর বেড়েছে তিস্তার। যার জেরে উত্তরবঙ্গের তিস্তা পারের জেলাগুলিতেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এর মধ্যে রাজ্যেও নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জল জমতে শুরু করেছে। বাঁধ বাচাতে জল ছেড়েছে ডিভিসি। আগামী কয়েক দিনে আরও জল ছাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয়েছে ডিভিসির তরফে। ফলে রাজ্যের সাত-আটটি জেলাতেও প্লাবনের আশঙ্কা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরেই নবান্নের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তবে পায়ের চোটের কারণে তিনি বৈঠক করেন কালীঘাটের বাড়ি থেকেই।
ফোনের স্পিকারে তাঁকে রেখে নবান্নের বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ নবান্নের অন্যান্য দফতরের সচিবেরা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সচিবদের প্রয়োজনীয় সমস্ত নির্দেশ দেন।
মমতা বলেন, ‘‘আমি পায়ের চোটের জন্য বেরোতে পারছি না। তবে রাজ্যের কয়েক জন মন্ত্রী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়োগ করেছি। তাঁরা বন্যা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। মেদিনীপুর, সবং এবং ঘাটালের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’টি কন্ট্রোল রুম খোলারও নির্দেশ দিয়েছি।’’ এর পরেই মুখ্য সচিব দ্বিবেদীর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘তোমরা কন্ট্রোল রুমের নম্বর দ্রুত জানিয়ে দাও। যাতে অসুবিধায় পড়লে মানুষ সমস্যার কথা জানাতে পারেন। আর একটা নম্বর আমার কাছেও দিও। আমি বাড়ি ২৪X৭ জরুরি পরিস্থিতির সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাজ চালাবে। আপাতত সবার ছুটি বাতিল। কারণ পুজোর মুখে এমন একটা বিপর্যয় আগে সামলানো দরকার।’’
তবে মুখ্যসচিব এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মমতা ওই বৈঠকে রাজ্যবাসীর প্রতিও কিছু বার্তা এবং পরামর্শ দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, ‘‘যাঁরা নীচু এলাকায় বসবাস করেন, তাঁদের বলব, আপনারা দয়া করে বাড়ি থেকে সরকারি শিবিরের নিরাপত আশ্রয়ে চলে আসুন। সাত-আটটি জেলায় জরুরি পরিস্থিত তৈরি হতে পারে। কারণ ডিভিসিকে আবার জল ছাড়তে হবে। মুকুটমণিপুরের বাঁধ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তাই জল আরও বাড়বে।’’ তবে একই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, যে সমস্ত এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল পৌঁছেও গিয়েছে। এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফের দল পৌঁছেছে। বৃষ্টিতে জমে যাওয়া জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে কি না সে দিকেও সতর্ক নজর রাখার কথা বলেছেন মমতা।