গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা আতঙ্কের সুরে বলেছিলেন, ডাকলেও আর রাজভবনে যাবেন না। বৃহস্পতিবার তিনি রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন থেকে প্রশ্ন তুললেন, তাঁর দলের বিধায়কেরাই বা কেন রাজভবনে যাবেন? বিশেষ করে তখন, যখন ‘রাজভবনের কীর্তিকলাপে’ মেয়েরা সেখানে যেতে আতঙ্কিত বোধ করছেন!
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী বলে দিয়েছেন। তার উপরে আর কোনও কথা চলে না। রাজভবনে আর যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। রাজ্যপাল মাননীয় ব্যক্তি। তাঁর পদকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এ ব্যাপারে দলনেত্রীর নির্দেশই চূড়ান্ত।’’
রাজভবন সম্প্রতি শিরোনামে ফিরে এসেছে দুই ভাবী তৃণমূল বিধায়কের শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে। বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকার ভোটের ফলপ্রকাশের ২৩ দিন পরেও শপথ নিতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সেই বিলম্বের জন্য মমতা শুধু রাজ্যপালকেই দায়ী করেননি। পরোক্ষে রাজভবনের ‘নিরাপত্তা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নবান্নের সরকারি বৈঠক থেকে। একই সঙ্গে, মমতা দলের বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তাঁরাও সায়ন্তিকাদের অবস্থানে গিয়ে যোগ দেন।
এটা স্পষ্ট যে, শপথগ্রহণ নিয়ে রাজ্যপালের উপর ‘চাপ’ বাড়াচ্ছে তৃণমূল। কারণ, বৃহস্পতিবার সংসদ চত্বরে রাজ্যপালের সমালোচনা করেছে তৃণমূলের সংসদীয় দল। লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালের উচিত বিধানসভায় গিয়ে ওঁদের শপথবাক্য পাঠ করানো। উনি দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ ভেঙেছেন। উনি নিজেও বিধানসভায় যাচ্ছেন না, স্পিকারকেও শপথবাক্য পাঠ করানোর অনুমোদন দিচ্ছেন না। উনি যা করছেন, তা সংবিধানের পরিপন্থী।’’
মমতা বলেন, ‘‘জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার (শপথগ্রহণ করানোর) দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবে?’’ এর পরেই সাম্প্রতিক অতীতে রাজভবনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘‘রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে।’’
সরাসরি না বললেও মমতা বুঝিয়েছেন, যে রাজভবনে এক মহিলা-সহ দুই বিধায়কের শপথ নেওয়ানোর ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন রাজ্যপাল, সেই রাজভবন মেয়েদের জন্য ‘সুরক্ষিত’ নয়। বস্তুত, অনেকেই মনে করছেন, যে শপথগ্রহণ ঘিরে রাজভবনের সঙ্গে বিধানসভার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে টানাপড়েন চলছে, সেই বিতর্কে মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টি টেনে এনেছেন মমতা। রাজভবনকে তিনি চিহ্নিত করেছেন মহিলাদের জন্য ‘অসুরক্ষিত’ স্থান হিসাবে।