ছবি: সংগৃহীত।
ডেঙ্গি নিয়ে সমালোচনার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিধানসভায় তীব্র উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘প্রায় ৪৫ হাজার আক্রান্তের মধ্যে এ-পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ২৭। চুয়াল্লিশ হাজার কেসে ২৭ জন যদি মারা যায়, বাকি রোগীদের তো সরকার বাঁচিয়েছে। আমরা সিরিয়াস বলেই এত লোককে বাঁচাতে পেরেছি। মশা কি তৃণমূল কংগ্রেস আমদানি করে নিয়ে এসেছে? আমদানি করতে পারলে ফার্স্ট বলতাম, আপনাদের কামড়াতে। বলি কামড়াতে? বুঝবেন, জনগণকে কামড়ালে কী হয়!’’
বিধানসভায় এ দিনের পৌনে দু’ঘণ্টার ডেঙ্গি-আলোচনা কার্যত সরকার ও বিরোধী শিবিরের তরজায় পর্যবসিত হয়। বিরোধীরা স্বাস্থ্য দফতরের তীব্র সমালোচনা করে এবং একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে কক্ষত্যাগ করলেন। সেই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডেঙ্গিতে পরের পর প্রাণহানির প্রেক্ষিতে বিধানসভায় আলোচনা চেয়েছিলেন বিরোধীরা। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সেই সংক্রান্ত আলোচনার প্রস্তাব পেশ করেন। ডেঙ্গি যে-ভাবে চরিত্র বদলাচ্ছে, শুরুতেই তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তিনি জানান, সরকারি বিজ্ঞাপনে আতঙ্কিত না-হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে দ্রুত মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। পুরসভা, পঞ্চায়েত স্তরে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়। কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, ‘‘তথ্য চলে যাচ্ছে বলে ভয় করার কিছু নেই। পরিস্থিতি ঠিক কী, সেটা মানুষকে জানাতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ত্রাণের খতিয়ান কেন্দ্রের, অভিযোগে অনড় রাজ্য
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীরা বলেছে বলে এবং প্রস্তাব আনতে হয় বলে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায় ঢাকতেই সঙ্ঘমিত্রা ঘোষকে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে বদলি করা হয়েছে। এই অভিযোগের প্রতিবাদ করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
তাঁর বক্তব্য, শিলিগুড়ির ডেপুটি সিএমওএইচ (২) পুরসভার কোন কোন ওয়ার্ডের অবস্থা খারাপ, তা চিঠি দিয়ে মেয়রকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘ডেঙ্গির মশার চরিত্র পাল্টেছে। আগে ডেঙ্গি১, ডেঙ্গি৩ ছিল। এখন ডেঙ্গি২, ডেঙ্গি৩ মিলে জটিলতা তৈরি করছে। কী জন্য হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা নিয়ে ৪৫ জন পতঙ্গবিদ গবেষণা করছেন।’’
বিরোধীদের বক্তব্যের যে কোনও সারবত্তা নেই, তা বোঝাতে পরিসংখ্যান পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও কখনও কোনও একটা রোগ কোনও কোনও রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যে-বাবুরা এখানে সমালোচনা করে গেলেন, তাঁরা মিথ্যা কথায় কাবু।’’ এর পরেই সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্তের নিরিখে রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, অসমে মৃতের সংখ্যা যে অনেক বেশি, তার তথ্য পেশ করেন তিনি। বাম আমলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কী ভাবে ক্রমবর্ধমান ছিল, সেই তথ্যও দেন। বিরোধীদের উদ্দেশে মমতার কটাক্ষ, ‘‘লেজ গুটিয়ে যখন পালিয়ে গিয়েছেন, তখন বুঝতে হবে, যা বলছেন, তা সত্য নয়, তথ্যও নয়। শুধু অসত্য, কুৎসা, চক্রান্ত, অপপ্রচার!’’
কক্ষত্যাগ প্রসঙ্গে বাম-কংগ্রেসের যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিধানসভার কার্যবিবরণীর ১৮৫ নম্বর ধারায় তাঁরা ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন আলোচনা হল ১৯৪ নম্বর ধারায়। ১৮৫ নম্বর ধারায় আলোচনা হলে বক্তব্যে সংশোধনী আনার সুযোগ ছিল। বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটাভুটির জায়গা ছিল। ১৮৫ নম্বর ধারায় যে-আলোচনা হচ্ছে না, তা-ও জানানো হয়নি। তাই প্রতিবাদ হিসেবে বিরোধীরা কক্ষত্যাগ করেছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে ডেঙ্গি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। চলতি বছরে বেশ বড় পরিসরে আলোচনার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তা পরিণত হল শাসক আর বিরোধীদের পারস্পরিক চাপান-উতোরে। সুরাহার কোনও গঠনাত্মক রাস্তা বেরিয়ে এল না।