ফের বিজেপিকে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন মূর্তিভঙ্গের রাতে। কণ্ঠস্বর ছিল সপ্তমে। ২৭ দিন পরে যখন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল, তখনও মমতা একই পথে হেঁটে বিঁধতে চাইলেন নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে। কিন্তু ১৪ মে রাতে যে প্রবল ঝাঁঝ দেখিয়েছিলেন তিনি, ১১ জুন দুপুরে তা অনেকটাই স্তিমিত। বার বার শুধু বললেন— বাংলাকে তিনি গুজরাত হতে দেবেন না। আর বিদ্যাসাগর, রামমোহনদের মতো মণীষীদের নিয়ে বাঙালির যে আবেগ, তাতে নাড়া দিয়ে চেষ্টা করলেন বিজেপির একটা বাংলা-বিরোধী ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলার।
শুধু বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে অবশ্য সীমাবদ্ধ থাকলেন না মুখ্যমন্ত্রী এ দিন। টেনে আনলেন সন্দেশখালি প্রসঙ্গও। বিজেপির যে ২ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের কর্মী কায়ুমকে মারতে তাঁর গ্রামে গিয়েছিলেন বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার হেয়ার স্কুলের মাঠে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মঞ্চেই বিদ্যাসাগরের নতুন মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাল্যদান হয় মূর্তিতে। মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষাবিদরা ছাড়াও সে মঞ্চে হাজির ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবুল বাশার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িদের মতো বিদ্বজ্জনরাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নিজের ভাষণকে মিলিয়ে দেন সেই লেখক-সাহিত্যিকদের ভাষণের সঙ্গে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দেওয়া যায়, কিন্তু বিদ্যাসাগরকে মোছা যায় না। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়ে বর্ণপরিচয় মুছে দেওয়া যায় না।’’
বিদ্যাসাগরের নতুন মূর্তির আবরণ উন্মোচন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: অশান্তি থামছেই না রাজ্যে, ফের রাজনৈতিক খুন, এ বার ভাটপাড়ায় হত ২ তৃণমূলকর্মী
বর্ণপরিচয়ের মলাটের আদলেই এ দিন সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান মঞ্চ। ওই একই রঙে তোরণ তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যাসাগর কলেজের সামনেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নিজের ভাষণের শুরুর দিকেই বলেন, ‘‘আজকের এই অনুষ্ঠানটার প্রয়োজন হয়তো ছিল না। কিন্তু প্রয়োজনটা একটা বিশেষ কারণে হয়েছে। এটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে, বাংলা ফেলনা নয়, বাংলা খেলনা নয় আর বাংলা ছেলের হাতের মোয়াও নয়।’’
গত ১৪ মে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহের হয়ে ধর্মতলা থেকে স্বামী বিবেকানন্দের ভিটে পর্যন্ত রোড শো করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শুরুতে কোনও গোলমাল না থাকলেও অমিত শাহের রোড শো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছতেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়। দু’পাশ থেকে উড়ে যেতে থাকে ইট-পাটকেল বা জলের বোতল। যে ট্রাকের উপরে অমিত শাহ ছিলেন, সেটিকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু ঠনঠনিয়ার কাছে বিদ্যাসাগর কলেজের গেটের সামনে আবার গোলমাল শুরু হয়। অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য সেখানেও জড়ো হয়েছিলেন কিছু পড়ুয়া। তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী বলেই জানা গিয়েছিল। তাঁদের সঙ্গেও বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। সংঘর্ষের পরে দেখা গিয়েছিল চুরমার হয়ে পড়ে রয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি।
মূর্তিভঙ্গের ঘটনার দায় সে রাতেই বিজেপির উপরে চাপিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে অভিযোগ নস্যাৎ করে বিজেপি বলেছিল, নিজেরা মূর্তি ভেঙে বিজেপির উপরে দোষ চাপাচ্ছে তৃণমূল। কে ভাঙল মূর্তি, তা নিয়ে চাপানউতোর এখনও অব্যহত। তবে এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের বিজেপির উপরেই দায় চাপিয়েছেন।‘‘এটা ভাঙা নয়, এটা আমাদের কৃষ্টিতে আঘাত করা, সংস্কৃতিতে আঘাত করা, জাগরণে আঘাত করা।’’ মঙ্গলবার এই মন্তব্যই করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে বলে মমতা এ দিন অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন: এনআরএস কাণ্ডের জের, রাজ্য জুড়ে সব মেডিক্যাল কলেজেই প্রতীকী কর্মবিরতি, বন্ধ আউটডোর পরিষেবা
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।