হাওড়ার পাঁচলার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
তিন মাস অন্তর ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। একই সঙ্গে ওই সরকারি প্রকল্পে এ বার তৃণমূল কংগ্রেসকে জুড়ে দিয়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাননি, তাঁদের সহযোগিতা করবেন ‘দিদির দূত’। মানুষের অভাব-অভিযোগ জানতে আগেই রাজনৈতিক স্তরে দলের প্রতিনিধি (দিদির দূত) পাঠানোর এই কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘এখন আর দূত, মেঘদূত, অবধূত পাঠিয়ে লাভ হবে না। এই সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে স্বাভাবিক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। দু’একটি চুল ছিঁড়ে নিলে মৃতদেহের ওজন কমে যায় না।’’
বৃহস্পতিবার হাওড়ার পাঁচলা মোড়ে একগুচ্ছ শিলান্যাস, উদ্বোধন এবং পরিষেবা প্রদান কর্মসূচিতে এসে মমতা ওই ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ১৫টি জেলার ৯১১টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। যার অর্থমূল্য ২০০৯ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকারে নয় কোটি মানুষ আবেদন করেছিলেন। সাত কোটি মানুষ পরিষেবা পেয়েছেন। দুয়ারে সরকার চলবে প্রতি তিন মাস অন্তর। দুয়ারে সরকারে যাঁরা পরিষেবা পাননি, তাঁদের না-পাওয়ার কারণ দেখবেন দিদির দূতেরা। সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা করবেন তাঁরা।’’
গত ১১ জানুয়ারি থেকে চলছে তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কেরা ‘দিদির দূত’ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। খোঁজ নিচ্ছেন সরকারি পরিষেবা নিয়ে। নানা জায়গায় তাঁদের বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে। তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই বিক্ষোভ প্রশমন করতেই এ বারে মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘টাকা না পেলে আমি মানুষের জন্য কাজটা করব কী ভাবে?’’ তবে, একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য নিজে থেকেই রাস্তার কাজ করবে। এর জন্য রাজ্য সরকার ২০০০ কোটি টাকার তহবিল করেছে। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজেরও বিকল্প হিসাবে আমরা জবকার্ডধারীদের জন্য এক বছরে প্রায় দশ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি করেছি।” ১০০ দিনের কাজের বকেয়া এবং আবাস প্রকল্পে টাকা বন্ধ করার অভিযোগ করে কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘গরিব লোকের টাকা মারবেন না। দয়া করে গরিবের টাকা ফিরিয়ে দিন।’’
রাজ্য সরকারের নানা উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র প্রসঙ্গও তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘১০০ দিনের কাজে বাকি সাত হাজার কোটি টাকা। আবাস যোজনায় ১১ লক্ষ মানুষ টাকা পাচ্ছেন না। রাস্তার টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এই টাকায় রাজ্যেরও অংশ আছে। কেন্দ্র যে টাকা দেয়, তা এই রাজ্য থেকেই জিএসটি বাবদ যায়। অথচ, কেন্দ্র রাজ্যের গরিব মানুষকে বঞ্চিত করছে। টাকা চলে যাচ্ছে আদার কারবারির হাতে। এলআইসি, ডাকঘর— সব না বিক্রি হয়ে যায়!’’
শমীকের পাল্টা আক্রমণ, ‘‘কেন্দ্র টাকা দিলে এই সরকার খরচ করতে পারে না। খরচ করলে হিসেব দিতে পারে না। ফলে তার এ নিয়ে আক্ষেপ ছাড়া কী করার আছে!’’ আদানি- বিতর্কে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘কেন স্পষ্ট করে আদানি গোষ্ঠীর নাম বলতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী? কেন বিনা টেন্ডারে এ রাজ্যের প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে তাদের?’’
এ দিন সভামঞ্চে উপস্থিত মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর উদ্দেশে করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাতে বাকিদের হাতে পরিষেবার নথিপত্র তুলে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি যত দিন বাঁচব, মানুষের জন্য বাঁচব। মানুষের জন্য করব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি যে কথাগুলি বলছি, এক দিন সুভাষচন্দ্র বসু বলে গিয়েছেন। আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। বিবেকানন্দ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। নজরুল বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। এখন আপনারাও শিখছেন নতুন করে।’’