মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। ছবি: টুইটার।
‘এক দেশ, এক ভাষা’-র আওতায় হিন্দি বাধ্যতামূলক করা নিয়ে কেন্দ্রের মনোভাবের বরাবর বিরোধিতা করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলির সঙ্গে এ রাজ্যের অবস্থানের কোনও ফারাক নেই। তামিলনাড়ু সফরে গিয়ে সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে হওয়া মমতার আলোচনাতেও উঠে এল সেই ভাষা-প্রসঙ্গ।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলা বা সংসদে আলোচনা ছাড়া হিন্দি ‘চাপিয়ে’ দেওয়ার চেষ্টা হলেও বিরোধিতার রাস্তা খোলা থাকবে। এই প্রশ্নে বিরোধীদের এক জোট হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে দু’টি ভাষা (ইংরাজি এবং মাতৃভাষা) এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে তিনটি ভাষার (ইংরাজি, হিন্দি এবং মাতৃভাষা) চল রয়েছে। এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত, কোনও ভাষাভাষী মানুষের বিরোধী তিনি নন। কিন্তু জোর করে প্রচলিত ভাষাগুলিকে এড়িয়ে কোনও একটি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, ভাষা নিয়ে কেন্দ্রের শাসক বনাম বিরোধীদের চাপানউতোর শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে জানাচ্ছেন, এ নিয়ে কেন্দ্রের বার বার অবস্থান বদলই বাড়তি সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। কারণ, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, একমাত্র হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই দেশের ঐক্যসাধন সম্ভব। তখন থেকেই ‘ভাষা-আগ্রাসন’-এর বিরুদ্ধে সরব হন বিরোধীরা। পরে অবশ্য অমিত শাহ বলেছিলেন, প্রশাসনিক কাজের ভাষা হিসাবে হিন্দি ব্যবহার হলেও, অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার মেলবন্ধনই হিন্দি ভাষার অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু গত এপ্রিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফের বলেন, হিন্দি ভাষাকেই ইংরেজির বিকল্প হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে হিন্দিকে নমনীয় না করে তুললে তার প্রসার হবে না।
গত অক্টোবরে সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল, কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের ভাষা হোক হিন্দি। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজি পেপার তুলে আসুক হিন্দি।
অতীতে বিশেষ করে সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলি কেন শুধুমাত্র ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ও রাজ্যগুলি। চাপের মুখে পড়ে পরবর্তী সময়ে নিটের মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায় আঞ্চলিক ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্র। সম্প্রতি মাদ্রাজ হাই কোর্ট একটি রায়ে জানিয়েছে, কোনও ভাবেই হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না।