বামেদের দলে ডাক, মমতার নিশানায় বিজেপি

তীব্র সিপিএম-বিরোধিতায় ভর করেই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় বাদই পড়তে বসেছে সেই সিপিএম! সোমবার ‘শহিদ দিবসে’র মঞ্চে সিপিএমের বিরোধিতায় কিছুই বললেন না তৃণমূল নেত্রী। যতটুকু বললেন, তা বিজেপি-র সম্পর্কে। রাজ্যের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক চিত্রই মমতার এমন পরিবর্তিত অবস্থানের কারণ বলে তৃণমূল সূত্রের অভিমত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

তীব্র সিপিএম-বিরোধিতায় ভর করেই তাঁর রাজনৈতিক উত্থান। ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে প্রায় বাদই পড়তে বসেছে সেই সিপিএম! সোমবার ‘শহিদ দিবসে’র মঞ্চে সিপিএমের বিরোধিতায় কিছুই বললেন না তৃণমূল নেত্রী। যতটুকু বললেন, তা বিজেপি-র সম্পর্কে। রাজ্যের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক চিত্রই মমতার এমন পরিবর্তিত অবস্থানের কারণ বলে তৃণমূল সূত্রের অভিমত।

Advertisement

বামপন্থীদের কথা একবারই তুলে তৃণমূল নেত্রী এ দিন বলেন, “বামপন্থীরা যাঁরা একটু আদর্শে বিশ্বাস করেন, তাঁরা আমাদের দলে আসুন। আমরা বামপন্থীদের শ্রদ্ধা করি। বিনম্র ভাবে বলছি, দয়া করে টাকার জন্য বা অন্য কারও কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেবেন না!” বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশে বিজেপি-তে যোগদানের সাম্প্রতিক প্রবণতা মাথায় রেখেই যে এমন আহ্বান, তা বলাই বাহুল্য!

যার উত্তরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্য, “উনি বোঝাতে চান, কেউ তাঁর দলে যোগ দিলে ঠিক আছে। না হলে ঠিক নেই!” ঘটনাচক্রে এ দিনই তৃণমূলে যোগ দেন চন্দ্রকোণার সিপিএম বিধায়ক ছায়া দোলুই।

Advertisement

বিজেপি নিয়ে অবশ্য ঈষৎ কড়া কথা শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। প্রথমে বিজেপি-র নাম না-করেই তীব্র কটাক্ষ করেছেন, “একটা আসন (এ রাজ্য থেকে লোকসভায়) তো ছিলই। এখন দু’টো হয়েছে। তাতেই এত হইচই, এত প্রচার, এত কুৎসা! পাঁচ বছর পরে ওটা আর দুই থেকে তিন হবে না! দুই থেকে জিরো হয়ে যাবে!” কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে যে ভাবে তিনি সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করতেন, সেই চড়া সুর এ দিন শোনা যায়নি। রেলভাড়া বাড়ানো এবং পেট্রো-পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে এক বারই মাত্র ‘বিজেপি’ শব্দটা উচ্চারণ করেছেন মমতা!

রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এ দিনের বক্তব্যের জন্য কড়া আক্রমণই করেছেন মমতাকে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “পাঁচ বছর পরে কী হবে, তা বলছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু দু’বছর পরের ভোটে কী হবে, তা বলছেন না কেন! রোজ রাজ্যের নানা জায়গায় হাজার হাজার মানুষ বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তা দেখে উনি ভয় পেয়েছেন!” পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, ৩০ নভেম্বর ধর্মতলায় তৃণমূলের এ দিনের সভাস্থলেই তাঁরা দলের ‘উত্থান দিবস’ পালন করবেন।

মমতা এ দিন যেমন সাম্প্রদায়িক শক্তিতে রোখার ডাক দিয়েছেন, বিজেপি-ও পাল্টা মুসলিম তোষণের অভিযোগ এনে তৃণমূলকেই ‘পশ্চিমবঙ্গের সব চেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দল’ বলে কটাক্ষ করেছে! আর বামেদের তরফে বিমানবাবু বলেছেন, “উনি (মমতা) কি বেমালুম ভুলে গেলেন, তাঁর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই ’৯৮ সালে বিজেপি এখানে প্রথম আসন জিতেছিল। পরের বার তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেই দু’জন সাংসদ হয়েছিল।” ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে আরএসএসের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মমতার মুখে সঙ্ঘ পরিবারের প্রশস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন বিমানবাবু। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, “উনি আজ যা বলেছেন, বিজেপি-র সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই বলেছেন!”

বাৎসরিক ২১শে-র সমাবেশের মতোই ধর্মতলা চত্বরে এ দিন ভিড় হয়েছিল ভালই। তবে তৃণমূলেরই একাংশের মতে, সভার সামনের চৌহদ্দি বাদ দিয়ে অন্যত্র আরও জনসমাগম কাঙ্ক্ষিত ছিল। তৃণমূল নেত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, মোট জনতার দশ ভাগের মাত্র এক ভাগ সভাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement