মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ফাইল চিত্র।
কলকাতায় ঢুকবে না দশ-বিশ চাকার ট্রেলার। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের জেরে নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে কলকাতা বন্দরের। রোজ বন্দরের ভিতরে জমছে জাহাজ থেকে নামানো অন্তত ৫০০ কন্টেনার। যা পরিস্থিতি, তাতে আরও দিন চারেক এই অবস্থা চললে কলকাতায় জাহাজ আনা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে। শুক্রবারেও বন্দরে তিনটি জাহাজ এসেছে। অন্য দু’টিতে পণ্য খালাস চলছিল। কিন্তু পরিস্থিতি একই থাকলে গড়ে পাঁচটি জাহাজ থেকে কন্টেনার ভর্তি পণ্য নামানো আর সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন বন্দরকর্তারা।
বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার অবশ্য আশা ছাড়তে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, রাজ্যের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার।’’
জাহাজ মন্ত্রকের খবর, কলকাতা বন্দরের বিভিন্ন বার্থে সর্বাধিক ৯০০০ কন্টেনার রাখা সম্ভব। এখন জমে আছে ৭০০০। ট্রেলার ঢোকা বন্ধ হওয়ায় গত তিন দিন ধরে রোজ অন্তত ১০০০ ট্রেলার কম বেরোচ্ছে। ফলে বন্দরে রোজ জমে যাচ্ছে অন্তত ৫০০ কন্টেনার। বন্দরের এক কর্তা বললেন, ‘‘আর চার দিন এমন পরিস্থিতি চললেই প্রতিদিন ২০০০ বাড়তি কন্টেনার জমা হবে বন্দরে। তখন জাহাজ থেকে নামানো কন্টেনার বার্থে রাখার জায়গা থাকবে না। ফলে জাহাজ আসা কমতে থাকবে।’’
আরও পড়ুন: বিপদ মাথায় নিয়ে পথ চলা
কেন এই পরিস্থিতি?
বন্দরকর্তারা জানান, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার আগে প্রতিদিন ১৬০০-১৭০০ ট্রেলার বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে বেরিয়ে যেত। তার মধ্যে ৫০ ভাগ কন্টেনারই ২২ চাকার ট্রেলারে নিয়ে যেতে হয়। সরকার বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতায় ওই সব ট্রেলার ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। এই দু’দিনে গড়ে মাত্র ৯০০-১০০০ ট্রেলার বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বেরোতে পেরেছে। ফলে রোজ বন্দরের ভিতরেই আটকে থাকছে অন্তত ৫০০ কন্টেনার।
তবে বন্দরকর্তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে পুলিশ শুক্রবার দুপুরে তিন ঘণ্টার জন্য ট্রেলার বার করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই সব ট্রেলার বন্দরের বার্থ থেকে বেরিয়ে নিকটবর্তী কন্টেনার ফ্রেট স্টেশন (সিএফএস)-এ পৌঁছতে পেরেছে মাত্র। তাদের শহরের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাতেও কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। কারণ, বন্দরের বার্থগুলি কিছুটা খালি হওয়ায় জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানো সম্ভব হয়েছে। কলকাতা পুলিশ বন্দর থেকে শহরের বাইরে ট্রেলার নিয়ে যেতে বাধা দিলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন বন্দরকর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় বছরে এক লক্ষ ৪০ হাজার ছোট কন্টেনার এবং ৭০ হাজার বড় কন্টেনার ওঠানামা করে। বড় কন্টেনারগুলিকে ২২ চাকার ট্রেলারেই নিয়ে যেতে হয়। হাওড়া পুলিশ শহরে সেই ট্রেলার ঢুকতেই দিচ্ছে না। ফলে সমস্যা বাড়বে।’’
আরও পড়ুন: বিপদ মাথায় নিয়ে পথ চলা
বিকল্প কী?
বন্দরকর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও নিবেদিতা সেতু দিয়ে কিছু কন্টেনার কলকাতায় ঢুকছে। কিন্তু সেই সব কন্টেনারও বেশ কিছু সেতু পেরিয়ে শহরে ঢোকে। পুলিশ যদি তাদেরও আটকে দেয়, তা হলে ঘোর বিপদ। বন্দরকর্তাদের মতে, ‘‘সেতু দুর্বল হলে সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হোক। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করুক পুলিশ। কিন্তু ট্রেলার ঢোকা যদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে রাজ্যের মধ্যেও পণ্য পরিবহণে সমস্যা হবে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নেপাল-ভুটান।
এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, সেতু ভেঙে যাচ্ছে বলে মেট্রোর কাজ বন্ধ। এ বার কি শক্তপোক্ত সেতু নেই বলে বন্দরও বন্ধ করে দিতে হবে? বড় ট্রাক বন্ধ হলে বন্দর চলবে কী ভাবে? ব্যবসা-বাজারেরই বা কী হবে? বাংলায় ভাল সেতু নেই বলে বড় ট্রাক চলবে না, এটা কেমন কথা! এর পরে কি ট্রাক তৈরিও বন্ধ করে দিতে হবে! ‘‘রাজ্য সরকারের এই অবস্থান বাস্তবসম্মত নয়,’’ বলছেন সূর্যবাবু।