কলকাতা বিমানবন্দরে অভিযুক্ত কাদের (লাল টি শার্ট) ও আলি। নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত। দিল্লির গাজিয়াবাদের একটি ফ্ল্যাটের সামনে তখন ছদ্মবেশে অপেক্ষা করছেন জনা কয়েক পুলিশ অফিসার। শিকার এলেই তাকে ধরতে হবে যে! এ বার বেশ আঁটঘাট বেঁধেই প্রস্তুত ছিলেন তাঁরা। জাল পেতেছিলেন সেই ভাবেই, যাতে ‘পাখি ফুড়ুত্’ না হয়ে যায় ফের। গোটা আবাসন তখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। অপেক্ষা সার্থক হল। একটা গাড়ি এসে থামল ওই আবাসনের সামনে। গাড়ি থেকে নিঃশব্দে নেমে এল দুই ব্যক্তি। তখনও জানত না তাদের জন্য ফাঁদ পেতে রেখেছে পুলিশ। ফ্ল্যাটে ঢুকতে যাবে, এমন সময় সেই ছদ্মবেশী পুলিশ অফিসাররা হাতেনাতে ধরে ফেললেন দু’জনকে।
এই দু’জনের একজন সাড়ে চার বছর আগে রাজ্য তোলপাড় করে দেওয়া পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের খান। অন্যজন মহম্মদ আলি খান। সেও পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলার অন্যতম ফেরার অভিযুক্ত। মামলায় এর আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে রুমান খান, নাসের খান এবং সুমিত বজাজ। ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল কাদের ও আলি। গণধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারলেও মূল অভিযুক্তদের কেন ধরতে পারছে না এই নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কলকাতা পুলিশ। ভর্ত্সনা করে আদালতও। এর পরই জোর কদমে কাদেরের খোঁজে অভিযানে লালবাজারের গোয়েন্দারা।
ঘটনার দুই সপ্তাহের পরেই চার অভিযুক্ত সুমিত বজাজ, নাসের খান ও রুমান খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাদের ও আলির খোঁজে মুম্বই-গোয়া থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দেন কলকাতা পুলিশের দুঁদে অফিসাররা। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছে প্রত্যেক বারই। এর পর খবর আসে কাদের বাংলাদেশ হয়ে পরে নেপালে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেই মতো ইন্টারপোল ২০১৩-য় লুক-আউট নোটিসও জারি করে কাদেরের নামে।
তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। এ দিকে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারাও কাদেরকে ধরার জন্য নিজেদের সমস্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে দেয়। শেষমেশ বড়সড় সাফল্য এল। বিদেশ থেকে নয়, দেশের মাটি থেকেই কাদের ও আলিকে গ্রেফতার করল তারা। আজ দুপুরে দিল্লি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় দু’জনকে। ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে এই দু’জনকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
সুজেট জর্ডন। ফাইল চিত্র।
২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। পার্ক স্ট্রিটের এক পানশালায় সুজেটের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিল কাদের আর তার বন্ধুরা। ফেরার সময় বিশ্বাস করে তাদের গাড়িতে উঠেছিলেন সুজেট। অভিযোগ চলন্ত গাড়িতেই তাঁকে ধর্ষণ করে কাদের। বাকিরা মদত জোগায়। রবীন্দ্র সদনের কাছে সুজেটকে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
একটু ধাতস্থ হয়ে পুলিশের কাছে যেতে দু-তিন দিন সময় নিয়েছিলেন সুজেট। তিনি জানতেন না, তাঁর লড়াই সবে শুরু হয়েছে মাত্র। পুলিশ থেকে শাসক দল থেকে শাসক দলের মহিলা সাংসদ সুজেটের চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কেউই। অভিযোগ, এফআইআর করতে যাওয়ার সময় পুলিশ শুধু তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারই করেনি, তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর ব্যাপারেও যথেষ্ট গড়িমসি করেছিল তারা। কাদের আর আলির গ্রেফতারির খবর অবশ্য জেনে যেতে পারলেন না সুজেট।২০১৫-র মার্চে মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
আরও খবর...