টোকায় ‘মদত’ প্রধান শিক্ষকের, নালিশ মাদ্রাসা শিক্ষিকার

তমালি ঝা নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাঘমারি ইসলামিয়া হাইমাদ্রাসার শিক্ষিকার ওই পোস্টে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৭
Share:

পরীক্ষা চলাকালীন টোকাটুকি হয়েছে জয়নগরের কাছে একটি মাদ্রাসায়। প্রতীকী ছবি।

পরীক্ষা চলাকালীন টোকাটুকিতে বাধা দিয়ে খোদ শিক্ষকেরাই হেনস্থার শিকার হলেন বহিরাগতদের হাতে। জয়নগরের কাছে একটি মাদ্রাসার এক শিক্ষিকা তাঁর ফেসবুক পেজে তেমনই অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষকের ভূমিকারও সমালোচনা করেন ওই শিক্ষিকা। তমালি ঝা নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাঘমারি ইসলামিয়া হাইমাদ্রাসার শিক্ষিকার ওই পোস্টে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

তমালিদেবীর দাবি, গত বুধবার এবং শনিবার যথাক্রমে আরবি ও ভৌত বিজ্ঞানের পরীক্ষা ছিল ওই মাদ্রাসায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি, বুধবার, টোকাটুকি ধরার সময় তৃণমূল স্বেচ্ছাসেবকের ব্যাজ পরে নজরুল মোল্লা নামে এক ব্যক্তি পুলিশের তোয়াক্কা না করে দলবল-সহ দোতলায় উঠে আসেন। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা দিতে হবে দাবি করে এক সহশিক্ষককে গার্ড না দিতে হুমকি দেন। শিক্ষকেরা প্রতিবাদ করলে প্রধানশিক্ষক স্টাফরুমে বসে সকলকে আশ্বস্ত করেন। পরে নজরুল মোল্লা অবশ্য ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চান।’’

ফেসবুকে তমালিদেবীর অভিযোগ, ১৬ ফেব্রুয়ারি, শনিবার তাঁর সঙ্গেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসার ৩৪ নম্বর ঘরে গার্ড দেওয়ার সময় নকল-সহ এক পরীক্ষার্থীকে তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই ছাত্রকে সব নকল কাগজ বার করতে বলি। তাতে জাহাঙ্গির মোল্লা নামে এক ব্যক্তি দলবল-সহ এসে স্টাফরুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আমার কাজের কৈফিয়ৎ চান। ঘটনার পরে জাহাঙ্গিরদের প্রধানশিক্ষক নিজের ঘরে নিয়ে যান। প্রধানশিক্ষক আমার থেকে নকল আটকের কারণ জানতে চান। আমাকে প্রতিশোধপরায়ণ বলেন।’’ ওই শিক্ষিকা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সর্ষের মধ্যে ভূত আছে। না হলে পরীক্ষাচলাকালীন স্টাফরুমে এসে হুমকি দিচ্ছে!’’

Advertisement

শনিবার রাতেই তমালিদেবীর ওই পোস্ট পড়ে মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন বলেন, ‘‘বহিরাগতরা কী ভাবে ওই মাদ্রাসার মধ্যে ঢোকার অনুমতি পেলেন সে বিষয়ে প্রধানশিক্ষক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দিতে বলেছি। ’’

প্রধানশিক্ষককে ঘটনার ‘মদতদাতা’ দাবি করে ওই শিক্ষিকা নিজের নিরাপত্তা এবং সম্মান থাকা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিজের পোস্টে। রবিবার সকালে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘হাইমাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের মদত ছাড়া ওঁরা এ ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার সাহস পেতেন না।’’

ঘটনার কথা স্বীকার করে ওই হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘‘বহিরাগতরা ঢুকেছিল এটা ঠিকই। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। প্রথম ঘটনায় নজরুল এসে ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন।’’কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন বহিরাগতদের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে অনুমতি দিলেন কেন? জবাব এড়িয়ে প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘ওঁরা আমার ঘরে এলেও সে দিন আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলিনি।’’ এর পরে তিনি ফোন কেটে দেন।

মাদ্রাসা পরিচালন সমিতির সম্পাদক শেখ মোজাফ্ফর বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসায় এ বারই প্রথম হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে। দূরের ছাত্রছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে নজরুল ও জাহাঙ্গিরের বাড়িতে ভাড়া করে থাকছে। পরীক্ষার্থীদের টোকাটুকিতে যাতে সুবিধা করে দেওয়া হয় সে বিষয়ে অভিভাবকেরা নজরুল, জাহাঙ্গিরকে চাপ দিচ্ছেন। জাহাঙ্গির ও নজরুলকে স্কুল চত্বরে আসতে নিষেধ করেছি।’’ জাহাঙ্গির ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘তিন জনকে নিয়ে মাদ্রাসায় ঢুকে প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তবে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি।’’ এ নিয়ে নজরুল মোল্লাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement