জলপাইগুড়ির মাধ্যমিকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, “এমন বহু কিছুই নজরে এসেছে। সবই পর্ষদকে জানানো হবে।”
ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিকের বহু উত্তরপত্রে অক্ষর চিনতেই নাকাল হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। খোলা খাতায় অনেকক্ষণ চোখ রেখে কেউ হয়তো উদ্ধার করতে পেরেছেন যে, অচেনা অক্ষরটি আসলে উল্টো করে লেখা ‘দ’। একই ভাবে ‘ই’ কারের মাথার চিহ্ন জুড়ে দেওয়া হয়েছে তলায়। কোনও খাতায় পাতা জুড়ে যা লেখা রয়েছে, তার একটি বর্ণও উদ্ধার করতে পারেননি পরীক্ষকেরা। লেখা বোঝা যায়নি বলে নম্বরও দিতে পারেননি। করোনা-আবহে দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার পরে মাধ্যমিকের খাতা দেখে পরীক্ষকেরা দাবি করছেন, পড়ুয়াদের অনেকেই অক্ষর ভুলে গিয়েছে। একটা-দু’টো নয়, অক্ষর চেনা যাচ্ছে না, এমন খাতার সংখ্যা অজস্র বলেই দাবি।
দু’বছর বন্ধ থাকার পর স্কুল খুললে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরের বহু পড়ুয়া নিজেদের নাম পর্যন্ত লিখতে ভুলে গিয়েছে। মাধ্যমিকের খাতা জমা পড়ার পরে শিক্ষকেরা দাবি করছেন, শুধু প্রাথমিক নয়, এই রোগ ধরেছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “যে পড়ুয়াদের বাড়িতে স্মার্ট ফোন ছিল না বা গৃহশিক্ষক পায়নি যারা, তাদের কার্যত দু’বছর পড়াশোনাই হয়নি। দু’বছরে তারা হয়তো একটা লাইনও লেখেনি। সেই পড়ুয়াদের অক্ষর ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।”
মাধ্যমিQকের একটি খাতায় দেখা গিয়েছে, পরীক্ষার্থী বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর লিখেছে। কিন্তু সেই লেখার পাঠোদ্ধার করা যাচ্ছে না। যিনি খাতা দেখেছেন, তিনি সেখানে স্পষ্ট লিখে দিয়েছেন— ‘এই লেখা পড়া সম্ভব নয়’। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা লক্ষ করেছেন, পড়ুয়ারা কিছু কিছু অক্ষর ভুলে গিয়েছে। মাধ্যমিকের খাতা দেখার দায়িত্বে থাকা বাংলার এক শিক্ষকের কথায়, “একজন পরীক্ষার্থী সারা খাতায় বারবার ‘দ’ এবং ‘গ’ ভুল ভাবে লিখেছে। দু’টোই উল্টে লিখেছে। একজন পরীক্ষার্থী ‘ছ’ লিখতে গিয়ে ‘চ’ লিখেছে। কেউ আবার ‘তালব্য শ’ ভুলে গিয়েছে।” একই অভিজ্ঞতা জীবন বিজ্ঞান বিভাগের এক প্রধান পরীক্ষকের। তিনি বলেন, “একজন তো ‘জীবন’ শব্দটি লিখেছে ‘যীবন’। আবার এক পরীক্ষার্থী প্রচুর লিখলেও কোন হরফে লিখেছে, তা উদ্ধার করা যায়নি। তাই শিক্ষক নম্বরও দিতে পারেননি।’’ এক পরীক্ষার্থী সাদা পাতায় কিছুই লেখেনি। শুধু ছবি আঁকার চেষ্টা করেছে বলে দাবি পরীক্ষকের। সেই পরীক্ষক বলেন, “হয়তো পরীক্ষার্থী লিখতে ভুলে গিয়েছে। তাই ছবি এঁকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার জন্য তো নম্বর দেওয়ার নির্দেশ নেই।” জলপাইগুড়ির মাধ্যমিকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, “এমন বহু কিছুই নজরে এসেছে। সবই পর্ষদকে জানানো হবে।”