আলিপুর আদালতের সামনে মদন মিত্র। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনী ময়দানে ছেলেদের যে আপাতত দেখতে চাইছেন না, সেটার ইঙ্গিত মিলছে তাঁর কথাবার্তায়। তবে ভোটের মাঠে নিজেকে যে অবশ্যই চান, সেই ব্যাপারে মদন মিত্রের ঢাক-ঢাক গুড়গুড় নেই। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, দল চাইলে জেলে বন্দি থেকেও বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তিনি প্রস্তুত।
এ দিন আলিপুর আদালতে হাজিরা ছিল মদনবাবুর। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে দুপুরে মদনবাবু যখন আদালত-চত্বরে পৌঁছন, তখনও বিচারক এজলাসে আসেননি। তখনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাখঢাক না-করেই মদনবাবু বলেন, ‘‘দল যদি নির্দেশ দেয়, ভোটের ময়দানে নামতে পিছপা হবো না।’’
যদিও এ দিন নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নে প্রথমটায় কোনও উত্তরই দিতে চাননি প্রাক্তন মন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। ‘প্রভাবশালী’ মদনবাবুর জামিন খারিজ হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি মন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা শুরু হয়, মদনবাবুর দুই ছেলের মধ্যে কোনও এক জনকে তাঁরই বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটিতে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। সেই বিষয়ে এ দিন প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে মদনবাবু বলেন, ‘‘ছেলেরা অবস্থা সামাল দিতেই ব্যস্ত। ওরা ভোটে লড়বে কী করে?’’
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার প্রায় ১১ মাস পরে আলিপুর আদালত মদনবাবুর জামিন মঞ্জুর করার পরে তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটিতে কার্যত অকালদেওয়ালি হয়েছিল। কয়েক দিন পরে কলকাতা হাইকোর্ট সেই জামিন খারিজ করে দেওয়ায় আবার একই ভাবে বিষণ্ণতা দেখা গিয়েছিল কামারহাটিতে। দীর্ঘদিন জেলে বন্দি থাকলেও কলকাতার বহু পুজো কমিটি সভাপতি করে রেখেছিল মদনবাবুকে। তাঁর মুক্তির দাবিতে শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন অনুগামীরা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের একাংশের মত, মদনবাবুকে যদি ফের প্রার্থী করা না-হয়, তাঁর জনপ্রিয়তার ফায়দা তুলতে তাঁরই ছেলেদের কাউকে কামারহাটিতে টিকিট দেওয়া যেতে পারে। নিজেই ভোটে লড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে মদনবাবু সেই জল্পনায় জল ঢালার চেষ্টা করলেন বলে মত অনেকের। কিছু দিন আগেই ‘মদন টাকা নেয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন মমতা। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের ধারণা, গ্রেফতারের পর থেকে তাঁর সঙ্গে মদনবাবুর সম্পর্কের শৈত্য নিয়ে জল্পনার ইতি এ ভাবেই ঘটাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মদনবাবুও দাবি করেছেন, সারদার সঙ্গে তিনি বা তাঁর পরিবারের কারও যোগ নেই।
গেরুয়া পাঞ্জাবি, গেরুয়া স্নিকার্সে আদালতে হাজির হন মদনবাবু। সাংবাদিকদের ভিড় দেখে মজার ছলে বলেন, ‘‘এক সময় আমি ছিলাম প্রভাবশালী। তার পরে হলাম বাহুবলী! এখন বজরঙ্গবলী!!’’ তার পরেই বললেন, ‘‘এখন রোজ হনুমান চালিশা পড়ি।’’ মদনবাবুকে আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মু্খ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরীর এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।