দুর্গাপুরে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ। ছবি: বিকাশ মশান।
রাজ্য নির্ধারিত ন্যূনতম দৈনিক মজুরির তুলনায় একশো দিন কাজের প্রকল্পে মজুরি কম। এই বৈষম্য দূর করতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন, বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে এসে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ। অনেক রাজ্যেই এই সমস্যা রয়েছে স্বীকার করে মন্ত্রীর আশ্বাস, পরিস্থিতি পাল্টাতে অর্থ মন্ত্রকের কাছে বাড়তি দু’হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
একশো দিনের কাজের মজুরির হার নিয়ে নানা রাজ্যেরই ক্ষোভ রয়েছে। ২০০৫ সালে প্রকল্প চালুর পরে প্রথম দু’বছর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের খেতমজুরদের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম দৈনিক মজুরির সমান টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু তার পরে খেতমজুরদের ‘কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স’ (সংসার চালাতে কেনা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ব্যবহার করা পরিষেবার দামের নিরিখে) অনুযায়ী একশো দিনের মজুরি ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। সেই মতো ওই প্রকল্পের মজুরি বাড়ানো হয়। গত এপ্রিলে এক দফা মজুরি বেড়েছে। এখন এ রাজ্যে ন্যূনতম দৈনিক মজুরি যেখানে ২২৫ টাকা, সেখানে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করলে মেলে ১৭৬ টাকা। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের মজুরি নিয়ে নানা রাজ্যের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখে অর্থনীতিবিদ এস মহেন্দ্র দেবের অধীনে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই কমিটি রাজ্যের ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে একশো দিনের প্রকল্পের মজুরি সমান করে দেওয়ার সুপারিশ করে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক তা গ্রহণ করেছে। কিন্তু তারা হিসেবে করে দেখেছে, সে জন্য অতিরিক্ত দু’হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। বীরেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘ওই টাকা মঞ্জুর করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রকে।’’ অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজের জন্য সাড়ে আটত্রিশ হাজার কোটি টাকা
বরাদ্দ করা হয়েছে, যা এই প্রকল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ওই বাড়তি টাকা মঞ্জুর করার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দুর্গাপুরের এক প্রেক্ষাগৃহে এ দিন নানা প্রকল্পের উপভোক্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীর আলোচনায় একশো দিনের কাজে মজুরিতে বৈষম্য থেকে শুরু করে প্রকল্পের টাকা না পাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। রাজ্যের নানা পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ করে টাকা না মেলার অভিযোগ তুলেছেন মজুরেরা। রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা বারবার দাবি করেছেন, কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় বকেয়া মেটানো যাচ্ছে না। এ দিনের সভাতেও এক উপভোক্তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করে টাকা পাই না। এটা কেন হবে?’’
বীরেন্দ্র সিংহের জবাব, ‘‘এই প্রকল্পে রাজ্য যা হিসেব দিয়েছে, সব টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও বকেয়া নেই।’’ রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও মেনেছেন, ‘‘এক সময়ে প্রচুর বকেয়া ছিল। কেন্দ্র তা মিটিয়ে দিয়েছে, এ কথা সত্যি।’’