গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তখনও ভোট শুরু হয়নি। সকাল সাড়ে ছ’টা। মাছিভাঙা গ্রামে বুথমুখী মানুষের ঢল দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, এটা কি সেই ভাঙড়? যে ভাঙড়ে ভোট শুরু হত বোমা-গুলির আওয়াজে, সেখানেই কি না সকাল সকাল ভোটারদের এত ভিড়!
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এমন ছবি ধরা পড়েনি। মনে খটকা লাগছিল, এক বছরের মধ্যে এতটা পাল্টে গেল ভাঙড়? এমন ছবি কি বেলার দিকেও ধরা পড়বে? নাকি গুলি-বোমার আওয়াজে ফের চেনা ছন্দে ফিরবে ভাঙড়?
না, ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত ছবিটা খুব একটা বদলায়নি। কোথাও আরাবুল ইসলামের বাইক বাহিনীকে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়নি। ভোটের লাইনে বোমাবাজির কোনও খবর নেই। চলেনি গুলিও। সকালে ভোট দিয়েই অবশ্য আরাবুল জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানোর এত সময় আমার নেই। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এ বার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।”
হলও তাই। আরাবুলই হোক বা কাইজার আহমেদ— এ দিন কারও বাহিনী বুথ দখলের জন্যে ঝাঁপায়নি। যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকেও দেখা যায়নি ভাঙড়ে। তবে হামলা এবং বুথ দখলের আশঙ্কায় সকাল থেকেই মাটি কামড়ে পড়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আরাবুলের বাইক বাহিনীকে রুখতে কার্যত গোটা ভাঙড় চষে বেড়ালেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে দিনভর অত্যাচার চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, অভিযোগ মমতার
ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকার একটি বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। রানিগাছিতেও নিজে গিয়ে সিপিএম এজেন্টকে বসিয়ে আসেন। এ ছাড়া অন্যান্য বুথে গিয়ে তিনি সিপিএমের এজেন্ট বসতে পেরেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখেন। শেষ পর্যন্ত মানুষের ঢল দেখে তিনি সন্তুষ্টও ছিলেন।
অন্য দিকে, কার্যত রাজনৈতিক হিংসা ভুলে উৎসবে মেতে ছিলেন তৃণমূল নেতারা। কাঁঠালিয়া পূর্ব গ্রামে তৃণমূলের তরফে প্রায় ৬ হাজার গ্রামবাসীকে খাওয়ানোর ‘টার্গেট’ নেওয়া হয়েছিল। কেনা হয়েছিল মাংস! অন্যান্য গ্রামেও একই ছবি ধরা পড়েছে। বোমাবাজি, বুথ দখলের বদলে এ দিন মাংস-ভাত খাইয়ে পালে হাওয়া টানেছেন তৃণমূল নেতারা— এ কথা বলছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা।
আরও পড়ুন: ফের এনডিএ নাকি ইউপিএর প্রত্যাবর্তন? বিকল্পের সম্ভাবনা কতটা— কে কোন দিকে ঝুঁকে
জমি রক্ষা কমিটির দাবি, ভোটের দিন অশান্তি হবে কী করে? দু’দিন আগে থেকেই তো গ্রামে গ্রামে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি বুথে ভিড় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এমন অনেক বুথ রয়েছে, যেখানে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। ভাঙড়ে লড়াই ছিল সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে। তবে ভাঙড়ে মানুষের সমর্থন হারিয়েছে তৃণমূল। তার প্রতিফলল ভোট বাক্সে দেখা যাবেই। এমনটাই দাবি কমিটির নেতাদের।
মিমির মতোই এ দিকে ফিরেও তাকাননি বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। তিনি যাদবপুরকে কেন্দ্র করেই বুথে বুথে ঘুরেছেন। কয়েকটি বুথে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। অভিযোগ, ভাঙা হয়েছে তাঁর গাড়িও। এ ছাড়া সপ্তম তথা শেষ দফায় যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে তেমন কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেনি। এ দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএমের তরফে দাবি করা হচ্ছে তাদের পক্ষেই ভোট পড়েছে।
আর মাত্র কয়েকটা দিন। ২৩ তারিখই স্পষ্ট হয়ে যাবে যাদবপুর থেকে সংসদে কে যাচ্ছেন।