প্রশিক্ষণে বৃহন্নলারা। নিজস্ব চিত্র
অন্যদের মতো ভোট দিতে চান তাঁরাও। কিন্তু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই বৃহন্নলা ভোটদাতাদের অনেকেরই। আর ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপ্যাট) ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁদের অনেকে অন্ধকারে। অবশেষে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণের সূত্রে ওই দুই যন্ত্রের ব্যবহার রপ্ত করলেন কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে বসবাসকারী বৃহন্নলারা।
ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ব্যবহার সম্পর্কে বৃহন্নলাদের সচেতন করতে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করেছিল বারুইপুর ব্লক প্রশাসন। গত সপ্তাহে মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের সেই শিবিরে হাজির ছিলেন জনা পঁয়ত্রিশ বৃহন্নলা। তাঁদের সকলেই ভোটার। ওই শিবিরে তাঁদের ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের হাতেকলমে ব্যবহার শেখান নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। এ বার লোকসভা ভোটে সব বুথেই থাকছে ভিভিপ্যাট।
বারুইপুরের বিডিও অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘মল্লিকপুরে অনেক বৃহন্নলার বাস। এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে বৃহন্নলারা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বাস করেন। সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। আমরা শিবির করে ওঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, বারুইপুরে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন মেরেকেটে ৫০ জন। বাকিরা যাতে ভোটার তালিকায় নাম তোলেন, তার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বৃহন্নলাদের ভোটদান শেখাতে এমন শিবির আগে কখনও হয়নি বলেই জানাচ্ছেন রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সদস্য অঞ্জলি মণ্ডল। বোর্ডে তিনিই বৃহন্নলা সম্প্রদায়ের একমাত্র প্রতিনিধি। মল্লিকপুর পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ওই শিবিরে ভিভিপ্যাটের ব্যবহার নিয়ে একটি ভিডিয়ো ক্লিপ তৈরি হয়েছে। অঞ্জলি জানান, যে-সব বৃহন্নলা ওই শিবিরে হাজির হতে পারেননি, ভিডিয়ো ক্লিপটি তাঁদের মোবাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিবিরে উপস্থিত এক বৃহন্নলা বলেন, ‘‘ইভিএম দেখেছি। কিন্তু ভিভিপ্যাট কী, তা এত দিন জানতাম না। কমিশনের লোকজন ভিভিপ্যাটের ব্যবহার শিখিয়েছেন।’’
পেশার টানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু বৃহন্নলা কলকাতা এবং শহরতলিতে আসেন। তাঁদের অনেকে এ বারেই প্রথম ভোটার লাইনে দাঁড়াবেন। অঞ্জলি বলেন, ‘‘মহিলা অথবা পুরুষ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, এমন বৃহন্নলার সংখ্যা অনেক। অনেকেই এ বার প্রথম ভোট দেবেন।’’ নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, রাজ্যের ছ’কোটি ৮০ লক্ষ ভোটারের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন মাত্র ১৪২৮ জন। অঞ্জলি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গকে মর্যাদা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বৃহন্নলাদের অনেকেই সামাজিক কারণে নিজের লিঙ্গ পরিচয়ে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করাতে চান না।’’