নকুলদানা বিলি করছেন তৃণমূল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
কষ্ট করে ভোট। চিন্তা নেই। গরমে রেহাই দিতে আছে নকুলদানা।
না থেকেও কেশপুরে রইলেন বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল। রইল তাঁর নকুলদানা। যা দেখে অনেকে তো বলেই ফেললেন, রবিবার কেশপুরের ভোট কাঁপাল তো সেই ‘কেষ্ট মডেল’।
এ দিন কেশপুরে নকুলদানা বিলি করেছে তৃণমূল। এদিন সকালে কেশপুর গার্লস হাইস্কুলের বুথের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তৃণমূলের শিবির থেকে ভোটারদের নকুলদানা দেওয়া হচ্ছে। কেউ ভোট দিয়ে এসে নকুলদানা নিচ্ছেন, কেউ বা ভোট দিতে যাওয়ার পথেই। এ ভাবে যাঁরা নকুলদানা বিলি করছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের ছাত্র নেতা সৌরভ কোলে। ভোটের কেশপুরে নকুলদানা কেন? সৌরভের জবাব, ‘‘নকুলদানা যে কেউ খেতে পারে। এতে রক্ত পরিষ্কার হয়।’’ কোথাও কোথাও এ দিন গুড়-বাতাসাও দেওয়া হয়েছে।
ভোটের সকালে বুথে ছিল ভোটারদের ঢল। কোথাও কিছু নেই। সব শান্তিপূর্ণ। যেমনটা হতো বাম আমলে। এন্তাজ আলিদের সময়ে। এ দিন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ কেশপুরে আসতেই হাতে হাতে গড়ে উঠল ব্যারিকেড। ‘ঢুকতে দেবনি’—অনড় তৃণমূলের মহিলা কর্মী, সমর্থকেরা। তারপর গোটবেড়িয়া, দোগাছিয়ায় দফায়, দফায় গোলমাল। ভারতী এলাকায় ছাড়ার পরে গোটগেড়িয়ার এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘এখানে সকাল থেকেই উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যে উন্নয়ন বুথের মধ্যেও ঢুকে যাচ্ছে। কে কী বলবে? কোনও প্রতিবাদ নেই।’’ রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের গুড়- বাতাসা বিলির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। আর এ বার তাঁর চমক ছিল নকুলদানা। গুড় বাতাসা হোক বা নকুলদানা এ বার সবই মজুত ছিল একসময়ের ভক্সলের আঁতুড় ঘরে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভারতীর নালিশ, ‘‘কেশপুরে আমাদের একের পর এক পোলিং এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়া হয়েছে। ইভিএমের পাশের জানলা খোলা। যাতে বোঝা যায়, কাকে ভোট দিচ্ছে। একসঙ্গে ৬- ৭ জন বুথের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। এ ভাবে ভোট হয় না। গণতন্ত্র পুরো নষ্ট করে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার।’’ ভারতীর অভিযোগের জবাবে তৃণমূল প্রার্থী দেব কখনও বললেন, ‘‘উনি (ভারতী) সকালবেলায় কাঁদতে লেগে গিয়েছেন। ভারতী ঘোষ কাঁদতে পারে? আজকে অভিনয়টা বেশি রাজনীতির মধ্যে চলে এসেছে।’’ আবার কখনও বললেন, ‘‘মোদীজি যেমন পশ্চিমবঙ্গকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছেন। তেমন ভারতীদি ঘাটালের মধ্যে কেশপুরকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছেন।’’
শাসকের মুখ বদলে যায়। কেশপুর বদলায় না। এখানে ভোট হয় শান্তিতে। তা হলে ভারতীকে ঘিরে কেন এত অশান্তি? তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘ঘুরে তো দেখলেন? তেমন অশান্তি ছিল কোথাও? যেটা হয়েছে সেটা ওকে (ভারতী) ঘিরে মানুষের বিদ্রোহ।’’
এত বিদ্রোহ কখনও দেখেনি কেউ।