গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মী অনন্ত গুছাইত। নিজস্ব চিত্র
জমিরক্ষার আন্দোলন পর্বে নন্দীগ্রামে পুলিশের পোশাক পরে, চটি পায়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
সেই জেলারই ভগবানপুরে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জংলা পোশাক পরে বিজেপি কর্মীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। গুলিতে জখম হয়েছেন অনন্ত গুছাইত ও রণজিৎ মাইতি। তাঁদের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বিজেপির রাজ্য নেতৃ্ত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি তপন মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই সেনার পোশাক পরে এসে আমাদের কর্মীদের উপর গুলি চালায়। তারা কোথা থেকে সেনার পোশাক পেল, তদন্ত চাই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রবিবারই বাসন্তীর নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, আরএসএসের লোকজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পরে রাজ্যে ঢুকেছে। ভগবানপুরের ঘটনায় অবশ্য পুলিশের ব্যাখ্যা, আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাই। এগরার এসডিপিও শেখ আখতার আলি বলেন, ‘‘শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ভগবানপুর-১ ব্লকের পশ্চিমবাড় গ্রামে বিজেপি কর্মীরা বিএসএফ জওয়ানদের উপর বোমা-গুলি নিয়ে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য জওয়ানেরা গুলি চালান। তাতে দু’জন জখম হয়েছেন।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মদনমোহন পাত্রের আবার দাবি, ‘‘বিজেপি নিজেদের মধ্যে গুলিগোলা চালিয়ে তৃণমূলের উপর দায় চাপাচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ ভগবানপুরের পশ্চিমবাড় গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় বসেই খাওয়াদাওয়া করছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, সেই সময় সামনে কেলেঘাই নদীর উপর আমড়াখালি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে জনা দশেক জংলা পোশাক পরা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বিএসএফ জওয়ানদের পিছনে রেখে সবংয়ের দিক থেকে এলাকায় ঢুকে পড়ে। খেতে বসা লোকজনদের লাথি মারতে শুরু করে তারা। বিজেপির কর্মীরা প্রতিরোধ করলে নদীপথে ফের সবংয়ে পালানোর সময় ওই দুষ্কৃতীরা বিজেপি কর্মীদের লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। প্রায় ১৬-১৭ রাউন্ড গুলি চলে বলে অভিযোগ। গুলি লাগে বিজেপি কর্মী অনন্তের বুকে ও রণজিতের ডান হাতে।
ঘটনাস্থলের কাছেই পশ্চিমবাড় প্রাথমিক স্কুলে রয়েছে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ২৩ ও ২৪ নম্বর বুথ। সেখানে তখন ভোটকর্মীরা জেগেই ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আচমকা পর পর গুলির আওয়াজে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ভয়ে রাতে কেউ ঘুমোইনি।’’ দুষ্কৃতীরা চলে গেলে স্থানীয় লোকজন জখম দুই বিজেপি কর্মীকে উদ্ধার করে ভগবানপুর ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতেই তাঁদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রবিবার তাঁদের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন ভগবানপুরের হিঞ্চাগেড়িয়ায় ৫৭ ও ৫৮ নম্বর বুথের সামনে বেলা ১২টা নাগাদ তৃণমূলের লোকজন বোমাবাজি করে বলে বিজেপির অভিযোগ। অনেকের কাছ থেকে ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বলেও অভিযোগ। তবে তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।