মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এক মঙ্গলে ঘোষিত হয়েছিল প্রার্থীতালিকা। আর এক মঙ্গলে প্রকাশিত হচ্ছে তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনের জন্য দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করবেন।
তবে, ওই ইস্তাহার শুধু বাংলাসর্বস্ব হবে না। বরং কেন্দ্রে সরকার গঠনে অংশ নিলে, সারা দেশে দলের নীতি এবং কর্মসূচি কী হবে, তার সবিস্তার বর্ণনাও থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
আগামী সপ্তাহের শুরুতে উত্তরবঙ্গ রওনা দেওয়ার কথা ছিল মমতা। তবে ইস্তাহার প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কলকাতাতেই থাকছেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। ২৬ মার্চ ইস্তাহার প্রকাশের পরেই উত্তরবঙ্গ সফরে রওনা দেবেন।
আরও পড়ুন: বয়কটের মধ্যেই পাক প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছাবার্তা মোদীর! টুইট ইমরানের
লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্প্রতি তৃণমূলের লোগোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। তেরঙা দাপট ঘুচিয়ে জোড়াফুল প্রতীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছেনীল-সাদাকে। সেই সঙ্গে বাদ দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস শব্দটিকেও।দলের ইস্তাহারেও সেরকমই পরিবর্তন আনা হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর। ২০১১ থেকে গত আট বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে বাংলায় কী কী উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছে তার বিবরণ থাকতে পারে ইস্তাহারে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী এবং গীতাঞ্জলির মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিও সবিস্তারে তুলে ধরা হতে পারে।
বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও, গোটা দেশকে মাথায় রেখে এ বার তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরি হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, বিজেপিবিরোধী শিবির যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে নয়া সরকারে তৃণমূলের কী ভূমিকা হবে, বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে কী ভাবে সারা দেশে রূপায়ণ করা সম্ভব হবে, ইস্তাহারে তার সবিস্তার বর্ণনা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ব্যর্থতাও তুলে ধরা হতে পারে।
২০১৬-র নভেম্বরে আচমকাই নোটবন্দির ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাতারাতি বাতিল করে দেন পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। শুরু থেকেই সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকারের পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি)-এরও বিরোধিতা করেন তিনি। নির্বাচনী ইস্তেহারে বিজেপির বিরুদ্ধে সেগুলি নিয়ে সরব হতে পারে তৃণমূল। উঠে আসতে পারে গোরক্ষার নামে তাণ্ডব এবং দেশেজুড়ে গণপিটুনিতে একাধিক মৃত্যুরঘটনাও।
গত পাঁচ বছরে একাধিকবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকার খর্বের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার। যার জেরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন রঘুরাম রাজন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সরকারের বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ তোলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সিবিআই কর্তা অলোক বর্মাকে সরানো নিয়েও সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছে মোদী সরকার। সেই প্রসঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তা-ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে কী বলেছেন, তৃণমূলের ইস্তাহারে তারও উল্লেখ থাকতে পারে। পদত্যাগের পর সরকারের বিরুদ্ধে কোন আধিকারিক কী বলেছেন তুলে ধরা হতে পারে তা-ও।
আরও পড়ুন: আরও বিপাকে জেট, বন্ধ হল ১৩টি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান পরিষেবা
এত দিন শুধুমাত্র বাংলা ও ইংরেজিতেই নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করত তৃণমূল। তবে এখন আর শুধুমাত্র বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নেই তারা। জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বেড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই মুহূর্তে বিজেপি বিরোধী শিবিরের অগ্রগণ্য নাম তিনি। তাই বিজেপি বিরোধী জোট কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে, তাতে তৃণমূলের ভূমিকা, নীতি ও কর্মসূচি কী হবে, তার সবিস্তার বর্ণনা থাকতে পারে ইস্তাহারে। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি, সারা দেশের কথা উঠে আসতে পারে তারা।
এ বছর পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন-চার রাজ্য থেকেও নির্বাচন লড়ছে তৃণমূল। তাই এতদিন শুধুমাত্র বাংলা ও ইংরেজিতে ইস্তেহার প্রকাশ করা হলেও, এ বার নেপালি, সাঁওতালি-সহ অন্যান্য ভাষাতেও ইস্তাহার প্রকাশ করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)