ভাঙড়ে এজেন্ট না বসতে দেওয়ার অভিযোগ বামেদের

রবিবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে ভাঙড়ের উদ্দেশে বেরোন বিকাশবাবু। যেতে যেতেই সিপিএমের এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার একের পর এক অভিযোগ আসছিল।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:১৪
Share:

হাতেনাতে: ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে হাসিবুল রহমান নামে এই এজেন্টকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। রবিবার, ভাঙড়ে। ছবি: পিন্টু মণ্ডল

বামেদের আশঙ্কা ছিল, ভাঙড়ের একাধিক বুথে এজেন্টকে বসতে দেওয়া হবে না। কারণ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে আগের দিন থেকে খবর আসছিল তেমনই কিছু হতে চলেছে। সে কারণেই রবিবার সাতসকালে ভাঙড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিকাশবাবু। যদিও চেষ্টা করেও পুরনো ছবি বিশেষ বদলাতে পারেননি বলে দাবি তাঁর। দিনভর কোথাও ছাপ্পা ভোট, কোথাও এজেন্ট বসতে দেওয়ায় বাধা, কোথাও বা ভোট না দিতে পারার প্রতিবাদ করায় বিকাশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। যদিও তৃণমূলের দাবি, ভাঙড়ে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ।

Advertisement

রবিবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে ভাঙড়ের উদ্দেশে বেরোন বিকাশবাবু। যেতে যেতেই সিপিএমের এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার একের পর এক অভিযোগ আসছিল। অভিযোগ আসে, কুলবেড়িয়া ধর্মতলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেজ্জাক মোল্লা নামে এক সিপিএম এজেন্টকে বুথে বসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। পুলিশে সেই অভিযোগ দায়ের করে বিকাশবাবু যান কৃষ্ণমাটি মাদ্রাসায়। যাদবপুর কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী কার্তিক কয়ালের এজেন্ট হয়ে সেখানে ছিলেন হাসিবুল রহমান। বিকাশবাবুর অভিযোগ, তিনি দেখেন, হাসিবুল ইভিএম যন্ত্রের কাছে পাঁচ জনকে নিয়ে ভোট করাচ্ছেন। তাঁকে দেখে অন্য চার জন পালালেও হাতেনাতে ধরা পড়েন হাসিবুল। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন বাম প্রার্থী। যদিও হাসিবুলের দাবি, ‘‘আমি নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট। ওঁদের বোঝাচ্ছিলাম ইভিএম চালানোর নিয়ম।’’

প্রিসাইডিং অফিসার সঞ্জীব রায় বলেন, ‘‘হাসিবুল এজেন্ট হিসেবে বসেছিলেন। হঠাৎই দেখি, ইভিএমের দিকে যেতে।’’ এই ঘটনায় বিকাশবাবু নির্বাচন কমিশনে রিগিংয়ের অভিযোগ দায়ের করেন। ফের বিকাশবাবু বেরিয়ে পড়েন এলাকা ঘুরতে। পথেই দেখা হয়ে যায় তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদের সঙ্গে। এ দিকে, খবর আসতে থাকে ছাপ্পা ভোট চলছে রানিগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সে দিকে তাঁর গাড়ি ঘোরালে কিছু দূরেই তা আটকে দেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ভোট তৃণমূল দিয়ে দিয়েছে। বাম প্রার্থী চলে যান ওই কেন্দ্রের ৪৬, ৪৭, ৪৮ নম্বর বুথে। দেখেন, কেন্দ্রে কোনও পুলিশি প্রহরা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। নেই দলীয় এজেন্ট। অবশেষে এজেন্টকে বুথে বসিয়ে বেরিয়ে এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন বিকাশবাবু। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। তৃণমূলের দাবি, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

Advertisement

বিকাশবাবু যখন জিরানগাছা অঞ্চলে পৌঁছন তখন আহাদ বক্সী মোল্লা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁর গাড়ি থামিয়ে বলেন, ‘‘কিছু বুথে সিপিএমের এজেন্ট নেই। ভোট দিতে দেওয়াও হচ্ছে না।’’ জিরানগাছা শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ৬৩ নম্বর বুথে গেলে বাম প্রার্থীর কাছে অভিযোগ করা হয়, সিপিএম এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়া হয়েছে।

প্রিসাইডিং অফিসারকে বলে এজেন্টের বসার ব্যবস্থা করেন তিনি। ভাঙড়ের বিস্তীর্ণ জায়গা থেকে এ দিন সিপিএমের এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।

এমনকি বহু বুথে সিসি ক্যামেরা, ওয়েবক্যাম কারও চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনকে সে সব জানিয়েছেন বিকাশবাবু। অভিযোগ, ভোগালি নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে গিয়ে তিনি দেখেন, দু’টি বুথের জানলা খোলা। কে কোথায় ভোট দিচ্ছেন, তা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে। সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনের লোক এলে সে দিকে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রার্থী। দ্রুত বিষয়টি ঠিক করার নির্দেশ দেয় কমিশন। এরই মধ্যে খবর আসে ভাঙড় দু’নম্বর ব্লকের হাটগাছিয়া সর্দারপাড়ার সাত ও আট নম্বরের ইভিএম খারাপ। প্রিসাইডিং অফিসারকে বলে দ্রুত তা সারানোর অনুরোধ করেন বিকাশবাবু।

এ দিন ভাঙড় চষে কী বুঝলেন সিপিএম প্রার্থী? বিকাশবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল বেশির ভাগ জায়গায় সিপিএমের এজেন্ট বসতে দেয়নি। তবে ৭৫ শতাংশ বুথে অবশেষে আমরা এজেন্ট দিতে পেরেছি।’’ এ বারের নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে রয়েছে জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। কমিটির মুখপাত্র অলীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পোলেরহাট এলাকার প্রায় সব বুথে সিপিএমের এজেন্ট দিতে পেরেছি। সেই সব জায়গায় মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটও দিতে পেরেছেন।’’ বিকাশবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদের দাবি, ‘‘দলের তরফে সিপিএম বা বিরোধীদের এজেন্ট বসাতে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। সিপিএমের এজেন্ট নিজেরাই বসেননি। ভোট এখানে শান্তিপূর্ণ হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement