ভোটযুদ্ধ। প্রতীকী চিত্র।
টানা প্রচারের ধকল শেষে মঙ্গলবার বাড়িতে থেকে একটু জিরিয়ে নিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগ প্রার্থী।
ভোরবেলায় উঠে কলকাতায় নিজের বাড়িতে ফেরার ট্রেন ধরেন তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। ভোটের ময়দানে নেমে সাধারণ মানুষের যাপিত-জীবন যে ভাবে দেখেলেন, তা নিয়ে বই লেখা শুরু করলেন সিপিএম প্রার্থী রেজাউল করিম। কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন সকালের দিকে কিছু সময় দলের কর্মীদের সঙ্গে কাটিয়ে ঘরমুখো হলেন। ব্যতিক্রমী ছিলেন বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল। ভোট পরবর্তী গোলমাল, হিংসার খবর পেয়ে ঘুরে বেড়ালেন কর্মীদের বাড়ি বাড়ি।
কে, কেমন ভোট পেল, সম্ভাব্য জয়ী কে, এমন নানা অলোচনা আছেই। কিন্ত, গরমকে উপেক্ষা করে সোমবার জেলা জুড়ে নির্বাচনকে ঘরে উৎসবের মেজাজ ছিল। অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। ফেস্টুন, পোস্টার দলীয় পতাকা, কোলাহল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি ছিল। ভোট মিটতেই মঙ্গলবার চেনা চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা। কমেছে প্রশাসনিক ব্যস্ততাও।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূলের বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায় ঘুম থেকে উঠেই রামপুরহাট থেকে কলকাতার ট্রেন ধরেন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পর পর দু’বার ফোন করেও সাড়া মিলছিল না। তৃতীয়বার ফোন করতেই বললেন, ‘‘ক্লান্তিতে চোখ লেগে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরছি। আগে ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করি। ওদের সঙ্গে সময় কাটাই। তার পরে দু’দিন ঘুমোতে চাই। তবে দল ডাকলে ফের ভোট প্রচারে বেরোব অন্য এলাকায়।’’
আদতে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও সিপিএমের শিক্ষক চিকিৎসক প্রার্থী রেজউল করিম কলকাতায় থাকেন। বললেন, ‘‘চল্লিশ দিন পরিবার থেকে দূরে রয়েছি। তাই বাড়ি ফিরব।’’ রেজাউল জানান, ২৭ বছর চাকরি করেছেন। তার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন ২০ বছর। অধিকাংশ সময় কাটে চার দেওয়ালের মধ্যে। ভোটের ময়দানে নেমে টানা একমাসে ১৩০০ কিমি হেঁটেছেন। পায়ে ফোস্কা পড়েছে। কিন্তু, রাজনীতিতে এসে এবং এত দিন বীরভূমের নানা প্রান্ত ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নিয়ে বই লেখা এ দিন থেকেই শুরু করছেন।
টানা এক মাস সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই যে ভাবে জেলার বিভিন্ন অংশে প্রচারে ছুটেছেন, সেই কাজে ছেদ টেনে একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে নিয়েছেন নলহাটি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন। তবে ঘুম থেকে উঠে চা খেয়ে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন। ইমাম বলছেন, ‘‘দু’দিন একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের কাজে লাগব।’’
ময়ূরেশ্বের বাড়িতে ঘুম ভাঙার পরে বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের দিনের সূচনা ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। সকাল সকাল ছুটেছিলেন সাঁইথিয়ার বনগ্রামে। সেখান থেকে সিউড়িতে। দুধকুমার বললেন, ‘‘ভোটের পর থেকে চার দিকে শাসকদলের কোপে পড়েছেন কর্মীরা। যাঁরা ভোটের জন্য দল ও আমার হয়ে প্রাণপাত করলেন, অসময়ে তাঁদের পাশে থাকতেই হবে। ২৩ তারিখ ভোটের ফল প্রকাশের আগে রুটিনের কোনও ঘাটতি হবে না।’’
ভোটের ফলে কী প্রত্যাশা, তার জবাবও দিয়েছেন সকলে। রেজাউল বলছেন, ‘‘যে ভাবে বাড়ির মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সকাল সকাল ভোটের লাইনে ভিড় জমিয়েছিলেন, তাতে শাসক বিরোধী ভোট হয়েছে বলেই আমার ধারণা। তবে কে জিতবে বলা কঠিন।’’ ফল তাঁর পক্ষেই যাবে, মনে করেন ইমাম। জেতার বিষয়ে সমান আশাবাদী শতাব্দী রায় এবং দুধকুমার মণ্ডল। দু’জনেই বললেন, ‘‘সোমবার জেলার বিভিন্ন এলাকা চষে মানুষের সঙ্গ কথা বলে মনে হয়েছে ভোট পড়েছে দলের অনুকূলেই।’’
এখন অপেক্ষা ২৩ মে-এর।