বনগাঁর সভায় যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
যাঁর সমর্থনে যোগী আদিত্যনাথের জনসভা, তিনিই মঞ্চে নেই!
বিমান-হেলিকপ্টারে করে সোমবার দুপুরে লখনউ থেকে বনগাঁয় বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় পৌঁছে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরের ঠাকুরনগর থেকে সেই সভায় যেতে পারলেন না শান্তনু। কারণ, তিনি বেজায় অসুস্থ— এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের এবং স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বেরও। কিন্তু মঞ্চে শান্তনুকে নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না আদিত্যনাথ। শুধু বিজেপির গুনগান গেয়েই ফিরে গেলেন!
এমন ঘটনায় কার্যত হতবাক এবং হতাশ সভায় আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। প্রার্থী না-আসার পিছনে অন্য কোনও সমীকরণ রয়েছে, এ গুঞ্জনও শোনা যায়। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, এই কেন্দ্রে বহু মতুয়া-ভোটার থাকলেও শান্তনুর অনুপস্থিতি তাঁদের কাছে অন্য বার্তা দেবে। ডঙ্কা-নিশান হাতে কিছু মতুয়া-ভক্তকে সভায় দেখা গেলেও তা আহামরি নয়।
তবে, বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘‘প্রার্থী সভায় না-থাকলেও ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। রবিবার রাত থেকে শান্তনু ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হন। সোমবার সকালেও বাড়িতে গিয়ে ওঁকে সভায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার জন্য সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।’’
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শান্তনুকে ফোন করা হয়। এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, ‘‘শান্তনু অসুস্থ। কথা বলতে পারবে না।’’ পরে ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ি গিয়ে দেখা গেল, শান্তনুর প্রচারের গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড় করানো। বাড়ির বারান্দায় বসে শান্তনুর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তিনি বললেন, ‘‘শান্তনুর শরীর খারাপ। সে কারণেই সভায় যেতে পারেনি।’’ তবে, শান্তনুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। তিনি কার্যত গৃহবন্দি হয়ে ছিলেন এ দিন।
বনগাঁ শহরের আরএস মাঠে ওই সভা আয়োজন করা হয়েছিল। বেলা ১২টা নাগাদ সভামঞ্চে দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দেবদাস মণ্ডল ঘোষণা করেন, ‘‘আর কয়েক মিনিটের মধ্যে যোগী আদিত্যনাথ এসে পৌঁছবেন।’’ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা ভেবেছিলেন, হয়তো আদিত্যনাথের সঙ্গেই সভায় আসছেন প্রার্থী শান্তনু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর দেখা না-মেলায় তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। জেলা বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, শান্তনু চেয়েছিলেন যোগীর সভা হোক ঠাকুরনগরে। তা না-হওয়ায় আসেননি।
বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ মনে করছেন, শরীর তেমন খারাপ হলে শান্তনু একদিনে সুস্থ হবেন না। আজ, মঙ্গলবার যদি তাঁকে ফের প্রচারে দেখা যায়, তা হলে গুঞ্জন অন্য মাত্রা নেবে। আর অসুস্থতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়? আপাতত সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে। তবে, শান্তনু সভায় না-যাওয়ায় উল্লসিত তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করছেন, শান্তনুর সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের বনিবনা হচ্ছে না।