সুনীল সিংহ
তাঁর মন নাকি বিজেপিতে, শুধু শরীরটাই যা পড়ে আছে তৃণমূলে— বিজেপি নেতারাই বলছেন এ কথা। তবে নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিংহ জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি তৃণমূলেই আছেন। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা অবশ্য তাঁর এই কথায় তেমন ‘দম’ খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে সুনীল সিংহকে নিয়ে রোজই নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে।
সুনীল শুধু তৃণমূল বিধায়ক হলে না হয় কথা ছিল। কিন্তু তিনি আবার সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তৃণমূল নেতারাও অনেকে সুনীলের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব দেখছেন বলে জানিয়েছেন। দলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘ওঁকে আমরা নজরে রেখেছি। তেমন কিছু দেখলে পদক্ষেপ করা হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সুনীল তৃণমূলেই রয়েছেন। উনি যে দলের অনুগত সৈনিক, সেই প্রমাণ তো ওঁকেই দিতে হবে।’’
অর্জুন যেমন ছিলেন ভাটপাড়ার পুরপ্রধান (অনাস্থা প্রস্তাবে সম্প্রতি অপসারিত হয়েছেন), সুনীল পাশের গারুলিয়া পুরসভায় রয়েছেন একই দায়িত্বে। গত বছর নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অর্জুন কার্যত হাতে ধরে তাঁকে বিধায়ক করেছেন বলে দলের অন্দরের খবর। নোয়াপাড়ায় প্রার্থী হওয়ার দাবিদার ছিলেন অনেকে। কিন্তু কার্যত অর্জুনের একার চেষ্টায় সকলকে টপকে সুনীল প্রার্থী হন। লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুরের টিকিটের জন্য পার্টির সর্বোচ্চ মহলে দরবার করেছিলেন অর্জুন। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। তারপরেই দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন। তখনই জল্পনা ছড়িয়েছিল, তাঁর সঙ্গেই দল বদলাচ্ছেন সুনীলও। তবে দলের নেতৃত্বের পাশে দাঁড়িয়ে সুনীল ঘোষণা করেন, তিনি দল ছাড়ছেন না। কিন্তু দল না ছাড়লেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ছে না।
কেন বিতর্ক?
তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, ইদানীং সুনীলের হাবভাবে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। দলের ছোট-বড়-মাঝারি সব নেতারাই যখন প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তখনও সুনীলের নাকি গা-ছাড়া ভাব। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের পুত্র, বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় নিজের এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলের নেতৃত্বও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘ও ভোট নিয়ে প্রচুর খাটছে।’’ কিন্তু জেলা নেতত্ব তেমন সন্তুষ্ট সুনীলকে নিয়ে হতে পারছেন না কই! কারণ, প্রচারে সুনীলকে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে দীনেশ বারাসতে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে সঙ্গে ছিলেন সুনীল। কিন্তু প্রচারে গা ঘামাতে সুনীলকে তেমন দেখা যাচ্ছে না বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
নোয়াপাড়ার নিহত তৃণমূল নেতা বিকাশ বসুর স্মরণ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে সব নেতাই হাজির ছিলেন। উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল কেবল এলাকার বিধায়ক সুনীলের। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর দলবদল নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। সুনীল বলছেন, ‘‘ওই অনুষ্ঠানের কথা আমাকে কেউ জানাননি। জানালে নিশ্চয়ই যেতাম।’’
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতারাও ময়দানে নেমে পড়েছেন। দলের রাজ্য নেতা অহীন্দ্র বসু সুনীল প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি যত দূর জানি, ওঁর দেহটাই তৃণমূলে রয়েছে। মনটা রয়েছে বিজেপিতে।’’ আর দলবদল প্রসঙ্গে সুনীলের মন্তব্য, ‘‘আমি তো তৃণমূলেই আছি। হতে পারে অর্জুন আমার আত্মীয়। ব্যক্তিগত সম্পর্ক একেবারেই আলাদা জায়গায়। তবে আমি বিজেপিতে যাচ্ছি না।’’ অর্জুনও বলছেন, ‘‘আমি যত দূর জানি, সুনীল তৃণমূলেই রয়েছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার খবর আমি জানি না।’’