অন্য-ছবি: পুরুলিয়া শহরে আনাজের খামারে গাছের পরিচর্যায় ফব-র বীরসিংহ মাহাতো।
যেন পরীক্ষা শেষ হল! টানা প্রায় দেড় মাসের ছোটাছুটি সেরে কিছুটা হাঁফ ছাড়লেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তাঁদের ‘টেনশন’ এখন স্ট্রংরুমে বন্দি। সোমবার বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়ার প্রার্থীদের দেখা গেল বেশ হালকা মেজাজে।
বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সোমবার বিকেলে সস্ত্রীক কলকাতা রওনা হয়েছেন। তার আগে দিনভর বাঁকুড়ার চাঁদমারিডাঙার হোটেলেই ছিলেন। দলের বিভিন্ন এলাকার কর্মীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছেন। জানতে চেয়েছেন, ভোট কেমন হয়েছে? হোটেলের ঘরে তাঁর সঙ্গে দেখাও করে যান জেলা তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা। কলকাতা ফেরার পথে সুব্রতবাবাবু বলেন, “কিছু দিনের মধ্যেই আবার বাঁকুড়ায় ফিরছি। কলকাতাতেও তো ভোট করতে হবে, তাই যাচ্ছি।”
বাঁকুড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্র ও বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার এ দিন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে স্ক্রুটিনিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। স্ক্রুটিনি সেরে অমিয়বাবু যান স্কুলডাঙায় দলের জেলা অফিসে। ভোটের দিন নানা ঝামেলায় জখম কর্মীদের দেখতে যান সুভাষবাবু। অমিয়বাবু বলেন, “অনেক হালকা লাগছে। ভোট ভালই হয়েছে। তবে জেলার ২৬টি বুথে নানা অনিয়ম হওয়ায় পুনর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছি। এখন দেখি, কমিশন অনুমতি দেয় কি না।”
সুভাষবাবু বলেন, “আমাদের কয়েক জন কর্মী ভোটের দিনে হামলার শিকার হয়েছেন। ওঁরা কেউ হাসপাতালে, কেউ নার্সিংহোমে ভর্তি। ওঁদের কাছে গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করছি।”
সাত তাড়াতাড়ি ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছিলেন বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরা। শ্যামলবাবু জানাচ্ছেন, গত দু’মাস তিনি বাড়িই যাননি। জয়পুরের একটি হোটেলে অস্থায়ী অফিস খুলে সেখানেই রাত কাটাতে হয়েছে। তাঁর প্রচারেও ছিল নানা চমক। কখনও চড়েছেন ঘোড়ায়। কখনও গরুর গাড়িতে। সোমবারও বাড়ি ফিরতে পারেননি তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, “দিনভর কোথায় কেমন ভোট হল সেই খবর নিতেই ব্যস্ত ছিলাম। তবে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কালই বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে বসে চুটিয়ে গল্প করব।”
ভোট মিটিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়েছিল পুরুলিয়ার তিন প্রার্থীর। সোমবার একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছেন।
তবে ভোটের পরের দিন রাজনৈতির কাজের থেকে ছুটি মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। প্রার্থীদের সবার দিনটাই কেটেছে নেতা কর্মীদের সাথে আলোচনা ও ভোট পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ের সমীক্ষা ও বিশ্লেষণে।
বিদায়ী সাংসদ তথা পুরুলিয়ার এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো সকালে বাড়ি থেকেই ফোন করেছেন চেনা পরিচিত কর্মীদের। জলখাবার খেয়ে তার পরে গিয়েছেন পুরুলিয়া শহরে জেলা পার্টি অফিসে। সেখানে বসে খোঁজ নিয়েছেন নির্বাচনের ভোটের হার, কোথায় কেমন তাঁর সমর্থনে ভোট পড়তে পারে, সেই সমস্ত নিয়ে। দুপুরে বাড়িতে ফিরে একটু গড়িয়ে নিয়েই ফের বিকেলে পার্টি অফিসে যান মৃগাঙ্ক।
বিজেপির প্রার্থী জ্যোর্তিময় সিং মাহাতোর দিনটাও কেটেছে রাজনৈতিক কাজকর্মের মধ্যেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে আসা কর্মীদের সঙ্গে কথাবর্তা বলেছেন। এক কর্মীর মোটরবাইকে সওয়ার হয়ে তার পরে দেখা করে এসেছেন কয়েকটি ব্লকের নেতা কর্মীদের সঙ্গে। দুপুরে ফিরেও ছুটি নেই। বাড়িতে কর্মীরা এসেছিলেন। খাওয়াদাওয়া সেরে ভোট নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন, নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনা কোথাও হয়েছে কি না।
রাতেই ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগ গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো। জানান, টানা দেড় মাসের পরিশ্রমের পরে এ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন একটু দেরি করেই। বেলা গড়াতেই বাড়িতে হাজির নেতা কর্মীরা। তাঁদের সাথে ভোট নিয়ে হয়েছে আলোচনা। দুপুরে খাওয়া সেরে ছোট্ট দিবানিদ্রা। তার পরে বিকেলে থেকে আবার বসেছেন কর্মীদের সঙ্গে।
বাম প্রার্থী বীরসিংহ মাহাতো জলখাবার খেয়ে বাঘমুণ্ডির সুপুরডি গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পুরুলিয়ার উদ্দেশে। পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফিরেছেন পুরুলিয়া শহরের বাড়িতে। দুপুরে সেখানেই খানিক বিশ্রাম নিয়ে বিকালে রোদ পড়লে গিয়েছিলেন পার্টি অফিসে।