নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই ‘ফেসবুক’ এবং ‘টুইটার’কে অস্বীকার করা যাবে না।
অল্পবয়সীরা খুব সচেতন—বিশ্বাস যাঁর, তিনি আসানসোল লোকসভা এলাকার বিশিষ্ট বিজেপি নেতা।
আসানসোলের মহিশীলা কলোনির বটতলা বাজার। হাত কুড়ি দূরে ‘প্রথমা’ আবাসন, বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় থাকেন যেখানে। বটতলায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা বলে চলেন, ‘‘এখনকার নতুন প্রজন্ম সব জানে, সব বোঝে। আমাদের প্রার্থীকে তাঁরা দেখতে পান। উনি কী করেন, না করেন, স্পষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁদের।’’
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা বছর তেইশের রাহুল এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন কথাটা। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন বাবা। কাঁধে রোজগারের দায়িত্ব। এ নিয়ে দ্বিতীয় বার ভোট দিতে চলা যুবকের দাবি, ২০১৮ সালে বিজেপির প্রার্থী, তারকা গায়ক এলাকায় প্রচারে আসার পরে তিনি একটি বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন ‘ফেসবুক’-এ। সেটি গৃহীতও হয়েছিল। সেই শুরু। গত পাঁচ বছর তিনি সাংসদকে নিয়মিত দেখে আসছেন ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেমন সে অভিজ্ঞতা? রাহুলের কথায়, ‘‘নানা জিনিস দেখি। ভুলেও মন্তব্য করি না।’’ তবে বিজেপি প্রার্থীর নানা ‘পোস্ট’ বা ‘টুইট’-এ ভাল লাগার রসদ যে মেলে তা জানাতে ভোলেননি তিনি। ‘‘মোদীজির (নরেন্দ্র) নানা জিনিস থাকে ওখানে, সেটা খুব ভাল লাগে। আমার বিশ্বাস, ওই লোকটি পারেন অনেক কিছু করতে।’’
তাই কি?
‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় মোদী বা বিজেপি প্রার্থীকে তারা দেখেছে কি না জানতে চাওয়ায় এক সঙ্গে ঘাড় কাত করে রানিগঞ্জের অর্ক, সত্যেরা। থাকে যে এলাকায় সেই সিহারসোলের নাটক-চর্চার ঐতিহ্য ১০৬ বছরের। ১৮ বছরের দুই তরুণই ইতিমধ্যে অভিনয় করে ফেলেছে দু’টি নাটকে। একটি পরিবেশ নিয়ে জনচেতনা বাড়াতে পথ নাটিকা। অন্যটি লালন ফকিরের জীবনভিত্তিক—সম্প্রীতির বার্তাবাহী।
দুই নতুন ভোটার জানাচ্ছে, ‘‘বিজেপি প্রার্থী যা করেন, তা ফেসবুকে দেখা যায়। উনি প্রধানমন্ত্রীর বিষয়েও লেখেন। বন্ধুরাও ফেসবুকে দেখেছে।’’ রানিগঞ্জের বিধায়ক সিপিএমের। বাড়িতেও কি বামপন্থী আবহ? সরাসরি জবাব না দিয়ে এ বারই প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাওয়া তরুণেরা বলে ওঠে, ‘‘ফেসবুকে সিপিএম প্রার্থীর প্রচারও আমরা দেখেছি।’’
নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই ‘ফেসবুক’ এবং ‘টুইটার’কে অস্বীকার করা যাবে না— মানছেন গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। নিজেও রয়েছেন দুই ডিজিটাল অবয়বে। আসানসোলের বাম-প্রার্থীর দাবি, ‘‘তরুণ-তরুণীদের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিতি রয়েছে আমাদের। রয়েছে নবীনদের ভাল লাগার জায়গা তৈরির জন্য নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। আশা করছি, দলের কাছে আসবেন নবীনেরা।’’
আসানসোলের ১৬ লক্ষ ভোটারের অন্তত অর্ধেক হিন্দিভাষী। দেশের বাড়ি বিহারের মুঙ্গের, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অনামিকার নাম এ বারই উঠেছে এই লোকসভা আসনের ভোটার তালিকায়। তাঁর বাবা কেন্দ্রীয় সংস্থার কারখানায় কাজ করতেন। আপাতত কর্মহীন। কোনও রকমে চলছে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া। ভোট-প্রচার কোথায় দেখলেন? ‘‘কেন মোবাইলে?’’ বলেই অনামিকা ঘোষণা করছেন তাঁর পছন্দ, ‘‘দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। উয়ো ছায়ি হুয়ি হ্যাঁয় (ছেয়ে আছেন)।’’