এই মাঠে হবে সভা। নিজস্ব চিত্র
সভা হওয়ার কথা ছিল সিউড়িতে। কিন্তু, ‘উপযুক্ত মাঠ’ না পেয়ে অমিত শাহের সভা সরানো হল মহম্মদবাজারের গণপুরে। সিউড়ি থেকে রামপুরহাট যাওয়ার রাস্তায় গণপুর বনক্ষেত্র শুরু হওয়ার আগে ফুটবল মাঠে আগামী ২২ এপ্রিল নির্বাচনী জনসভা করবেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি।
সিউড়ি থেকে সভা সরাতে হচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে একটু মন খারাপ হলেও এই স্থান পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছে বিজেপি শিবির। কেননা এই মুহূর্তে জেলায় যে কয়েকটি জায়গায় সংগঠনগত বিজেপি শক্তিশালী, সেই তালিকায় রয়েছে মহম্মদবাজার ব্লক এবং ওই ব্লকের গণপুর। রাজ্যের শাসকদলের কাছে এখনও অস্বস্তির জায়গা মহম্মদবাজার। জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে যে দু’টি বিরোধী বিজেপি দখল করেছে, তার একটি হল গণপুর। বিজেপি-র দাবি, ওই এলাকায় তাদের দাপট যে, তার প্রমাণ মিলেছে নির্বাচনী প্রচারের জন্য দেওয়াল দখলের লড়াইয়ে। সেই কাজে তারা তৃণমূলের চেয়ে ঢের এগিয়ে।
জেলা বিজেপি সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘ফের যাতে শাসকদলের যড়যন্ত্রে মাঠ নিয়ে না বিভ্রাট হয়, তাই দলের সর্বভারতীয় সভাপতির জন্য গণপুরকেই বাছা হয়েছে।’’ বিজেপির আহ্বায়ক তথা গণপুরের নেতা শুভ্রাংশু চৌধুরীর দাবি, ‘‘আমার এলাকা তো বটেই, গোটা মহম্মদবাজার ব্লকেই শাসকদলের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে! কাছেই তৃণমূল এখানে কিছু করতে পারবে না। জনপ্লাবন ঘটবে অমিতজির সভায়।’’ যা শুনে জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা বিকাশ রায়চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওরা কোথায় সভা করছেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা সারা বছর মানুষের পাশে আছি। দু’টি আসনেই আমরা বিপুল ভোটে জিতব, এই বিশ্বাস আমাদের আছে।’’
বীরভূমে ভোট ২৯ এপ্রিল। ২৪ তারিখ বোলপুরে সভা করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু, উপযুক্ত মাঠ পাওয়াই চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠেছিল বিজেপির জেলা নেতৃত্বের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য যে জায়গা বিজেপি বেছেছিল, বোলপুর শহরের সেই ডাকবাংলো মাঠ ইতিমধ্যই ‘বুক’ করে ফেলেছে সিপিএম। পরিষদের অধীনে থাকা ওই মাঠে ২৪ তারিখই সভা করবেন সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর মাঠের জন্যও বোলপুর থেকে একটু সরে ইলামবাজার বোলপুর রাস্তা ঘেঁষা কামারপাড়ার মাঠ বাছা হয়েছে। জমির মালিকেরা সভা করার জন্য সম্মতিও দিয়েছেন। শেষে কী হয়, সেটা আজ, বৃহস্পতিবার জানা যাবে।
ও দিকে, অমিত শাহের সভার জন্য মঙ্গলবার সিউড়িতে জেলা পুলিশের চাঁদমারি প্যারেড গ্রাউন্ড চেয়ে আবেদন করে বিজেপি। কিন্তু, ২১-২৫ তারিখ পর্যন্ত ওই মাঠ শাসকদল নিয়ে রেখেছে বলে পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই মাঠেই ২৫ তারিখ সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় প্রাথমিক ভাবে বিজেপি নেতারা ঠিক করেন, অমিতের সভার জন্য জানুয়ারিতে যে রাস্তা বাছা হয়েছিল, সেই পথেই হাঁটা হবে। জানুয়ারিতে সিউড়িতে অমিতের সভার মাঠ না পেয়ে দলেরই নেতা কালোসোনা মণ্ডলের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন চাষজমিকে বেছে নেওয়া হয়। রামকৃষ্ণবাবু জানাচ্ছেন, কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টিতে কৃষিজমি কতটা উপযুক্ত হবে, সেই ভাবনা থেকে শেষ পর্যন্ত গণপুরকেই বেছে নেওয়া হয়। সেই খবর পেয়ে রীতিমতো চাঙ্গা মহম্মদবাজারের বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
বস্তুত, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতে তেতে রয়েছে মহম্মদবাজার। গত বছর মে মাসের ৭ তারিখ প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত করে মহম্মদবাজার ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসেন প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ওই ঘটনার পরপরই ১০ হাজার ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করায় এবং বেশ কিছু বিরোধী নেতা-কর্মী গ্রেফতার হওয়ার পরে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। গণপুর পঞ্চায়েত দখল করা ছাড়াও রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটি বিজেপি তৃণমূল ৩-৩ আসনে ‘টাই’ হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতি এবং আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু আসনে বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছেন।
সেই আবহে ফের একবার অমিত শাহের নির্বাচনী জনসভাকে ঘিরে চমক দেওয়া সম্ভব হবে মনে করছেন বিজেপি কর্মীরা।