সবুজ? ‘‘সমস্যা নেই।’’
লাল? ‘‘আপত্তি নেই।’’
গেরুয়া? উত্তরদাতারা চুপ।
প্রচার-গানে কয়লা-চুরি এবং বালি চুরি নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন আসানসোল লোকসভার বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তৃণমূলের ‘কয়লা মাফিয়া’, ‘বালি মাফিয়া’ যোগ নিয়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আবার আরএসএস, বিজেপির কয়লা মাফিয়া যোগ নিয়ে শুক্রবার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন প্রেক্ষিতে অবৈধ কারবারের শ্রমিকদের একাংশের রাজনৈতিক পছন্দ জানতে চাওয়ায় মিলেছে এই প্রতিক্রিয়া।
রানিগঞ্জে দামোদর ও পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়ায় অজয় নদের পাড় লাগোয়া এলাকায় অবৈধ কয়লা এবং বালির কারবার চলে বলে শোনা যায় কান পাতলে। ‘ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড’ (ইসিএল)-এর এক কর্তা জানাচ্ছেন, বারাবনি, সালানপুর এলাকাতেও অবৈধ কয়লা কারবারের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, জেলায় অবৈধ কয়লা-বালির কারবার বন্ধ।
অবৈধ কয়লা কালো-বাজারে বিক্রি হয় ১,৪৬০ টাকা প্রতি টন দরে। দৈনিক চুরি-পাচারের অঙ্কটা কম নয় বলে দাবি কারবারিদের। কিন্তু সে টাকার ভগ্নাংশ পৌঁছয় শ্রমিকদের কাছে। জেলায় এমন শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। ডামালিয়া গ্রাম লাগোয়া এলাকার গৌর মোদকের (নাম পরিবর্তিত) দাবি, অন্তত বছর কুড়ি ধরে কাটছেন কয়লা। গৌরের পারিশ্রমিক দৈনিক ৭০০ টাকা। সঙ্গে কয়লার একটি বস্তা ।
মধ্য চল্লিশের মানুষটির দাবি, ‘‘আগে লাল পার্টি মিটিং-মিছিলে যেতে বলত।’’ ‘পরিবর্তন’-এর পরে? গৌরের দাবি, ‘‘ব্যবসা বন্ধ ছিল কিছু দিন। এখন সব ঠিক।’’ এত বছরে কী বদলাল? গৌর বলেন, ‘‘মেয়ে ‘সবুজসাথী’র সাইকেল পেয়েছে। রাস্তা হয়েছে। জল এসেছে।’’
একই রকম প্রতিক্রিয়া গোবিন্দ পালের (নাম পরিবর্তিত)। রানিগঞ্জে ‘ইসিএল’-এর একটি বৈধ বালির ঘাটের পাশ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে দিন চলে, দাবি তাঁর। ২০০ টাকা রোজ। জানাচ্ছেন, দু’টাকা কেজির চাল, বিপিএল কার্ড পেয়েছেন রাজ্যে ‘পরিবর্তন’-এর পরে। তাঁর কথায়, ‘‘যা চলছে, যাদের দৌলতে চলছে, ভোট দেওয়ার সময় মাথায় থাকবে।’’ গোবিন্দ এবং গৌর এলাকার বামপ্রার্থীকে চেনেন। ‘‘সাচ্চা লোক’’, বলেছেন তাঁরা।
হাসছেন সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। ‘‘মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে খুব পছন্দ করি। কিন্তু আমি কমিউনিস্ট’’, প্রতিক্রিয়া তাঁর। বামেদের বিরুদ্ধে অবৈধ কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগ না মেনে তাঁর দাবি, ‘‘কয়লা, বালি এবং যে কোনও মাফিয়ার বিরুদ্ধে আমি।’’ মনে করাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের দায়িত্ব কয়লা চুরি রোখা এবং সে কয়লা যখন ট্রাকে পাচার হচ্ছে, রাজ্যের রাস্তায় তা আটকানোর কথা রাজ্য পুলিশের।
আসানসোলের মেয়র তৃণমূলের জিতেন্দ্র তিওয়ারির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আগের জমানায় কাদের মদতে, কী হত দেখেছে লোকে। আর সিআইএসএফ থাকতে কয়লা চুরি হয় কী করে? কে সারা বছর কয়লা চুরি করায় আর ভোটের সময় রোখার ভান করে সেটা জানে সবাই।’’
বাবুলের দাবি, সিআইএসএফের একাংশকে ফাঁদে বা চাপে ফেলা হচ্ছে, যাতে তাদের কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়ায়। বলছেন, ‘‘আমরা কোনও অবৈধ কারবারে জড়িত নয়, তা এলাকার সবাই জানেন।’’
‘গেরুয়া’ রঙের কথা শুনে চুপ করে ছিলেন গৌর-গোবিন্দেরা।