দুই ঘরে বসে দুই নেতার ‘তড়পানি’, আতঙ্কে ক্যানিং

দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা অনেকে আড়ালে বলছেন, ‘‘দাদারা যাদের পার্টি অফিসে এনে পাশে বসিয়ে রেখেছেন, চা-বিড়ি খাওয়াচ্ছেন, তাদের ভয়ে তো আমরাই ধারেকাছে ঘেঁষতে পারছি না!’’

Advertisement

শুভাশিস ঘটক ও সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৪২
Share:

দলীয় কার্যালয়ে দলবল নিয়ে বসে আছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শৈবাল লাহিড়ি। ক্যানিংয়ে। —নিজস্ব চিত্র

দলীয় কার্যালয়ে পাশাপাশি দু’টি ঘর। ভোটের আগে সেখানে দলের নেতা-কর্মীরা ভিড় করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই নেতার যে বহু দিন মুখ দেখাদেখি নেই। দু’পক্ষই আশেপাশে যাঁদের জমায়েত করে রেখেছেন, তারা এলাকার দাগি দুষ্কৃতী বলে অভিযোগ দু’পক্ষেরই।

Advertisement

বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা অনেকে আড়ালে বলছেন, ‘‘দাদারা যাদের পার্টি অফিসে এনে পাশে বসিয়ে রেখেছেন, চা-বিড়ি খাওয়াচ্ছেন, তাদের ভয়ে তো আমরাই ধারেকাছে ঘেঁষতে পারছি না!’’

গত কয়েক দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলছে ক্যানিং বাজারে তৃণমূলের ব্লক অফিসে। জয়নগর আসনের ভোটে ক্যানিং (পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় হয়েছে এখানেই। সেখানেই পাশাপাশি দু’টি ঘরে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে আসর জমিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের ক্যানিং ১ ব্লক সভাপতি শৈবাল লাহিড়ি। অন্য ঘরে ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পরেশরাম দাসের অধিষ্ঠান। দুই নেতার আকচাআকচি বহু দেখেছেন ক্যানিংয়ের মানুষ।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

‘মাদার’ (মূল তৃণমূল সংগঠন) এবং ‘যুব’র মধ্যে মারপিট, বোমাবাজি, গোলাগুলির লড়াইয়ের সাক্ষী এই এলাকা। রক্তও কম ঝরেনি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ধমক-ধামককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্যানিংয়ে দলের কোন্দল চলেছে গত কয়েক বছর ধরে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করা হলে গুরুতর শাস্তির ব্যবস্থাও হতে পারে।’’

অন্য একটি ঘরে রয়েছেন তৃণমূল নেতা পরেশরাম দাস। ক্যানিংয়ে। —নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটের আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার জানিয়ে দিয়েছেন, সকলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ঘরোয়া বিবাদ বরদাস্ত করা হবে না। এই পরিস্থিতিতে ঢেঁকি গেলার মতো অবস্থা যুযুধান দুই পক্ষের দুই নেতার। এক সঙ্গে অফিসে বসে ‘মিলনের’ বার্তা দিতে হচ্ছে। আবার লোকলস্কর জড়ো করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার তাগিদও আছে। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি খুবই থমথমে। কখনম যে কী ঘটে যায়!’’

দলের কিছু নেতার আক্ষেপ, ভোটের মুখে কোথায় মিটিং-মিছিলের পরিকল্পনা হবে, আরও কত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থাকে এখন। সে সব না করে এ ওকে গালি দিচ্ছে তো ও তাকে হুমকি! প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডলকেও আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।’’

কিছু যে ঘটতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কিত আছেন পুলিশ কর্তারাও। ইতিমধ্যেই শৈবাল ও পরেশ শিবিরের পক্ষ থেকে থানায় একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। লোক জড়ো করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলছে দু’পক্ষই।

বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকায় টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

শৈবাল অবশ্য বলেন, ‘‘ভোট উপলক্ষে অনেকেই দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। দুষ্কৃতী জমায়েতের কোনও বিষয়ই নেই। ওরাই (পরেশ গোষ্ঠী) দুষ্কৃতী নিয়ে এসে কটূক্তি করছে, হুমকি দিচ্ছে। সর্বক্ষণ সমাজবিরোধীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ভিড় করে বসে থাকছে।’’

শৈবালের আশঙ্কা, ‘‘যে কোনও সময়ে ওরা গন্ডগোল পাকাতে পারে। বিষয়টি পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’

পরেশের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘দলের নির্দেশ মেনে এক সঙ্গে দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যে ভাবে দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে সমাজবিরোধীদের জড়ো করা হচ্ছে, তাতে আমি আতঙ্কিত। আমার উপরে হামলার আশঙ্কা করছি। পুলিশকে জানিয়েছি।’’

সমস্যাটা যে ভাল মতো পাকিয়েছে, অস্বীকার করছেন না প্রার্থী নিজেও। তিনি বলেন, ‘‘আমার নির্বাচনী কেন্দ্রের বেশ কিছু জায়গায় গোষ্ঠী সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। শীর্ষ নেতৃত্ব জনপ্রতিনিধি ও সাংগঠনিক নেতৃত্বকে এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলেছেন। তারপরেও যদি কেউ শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে গন্ডগোল করে, তা হলে বিষয়টি উপরমহলই বুঝবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement