রূপালী বিশ্বাস
ঘুণাক্ষরেও আঁচ পাননি তিনি। তৃণমূলের মহাসচিব রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা বলে একেবারে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী! তা-ও আবার তাঁর মতো কাউকে যিনি জীবনে কোনও দিন রাজনীতিই করেননি?
কল্পনাই করতে পারেননি নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস। মঙ্গলবার বিকেলে টিভিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়ার রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা মাত্র বাড়ির সকলের সামনেই তিনি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন। ‘‘ওর (সত্যজিৎ) মুখই প্রথম ভেসে উঠেছিল চোখের সামনে’’ — বলছেন রূপালী।
রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডলকে সরিয়ে যাঁকে নতুন প্রার্থী করল তৃণমূল, সেই রূপালী কস্মিন কালেও রাজনীতির ছায়া মাড়াননি। সত্যজিৎ ছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের দাপুটে নেতা তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি। কিন্তু স্বামীর সঙ্গেও রাজনীতি নিয়ে বিশেষ কথা হত না তাঁর। বেতাই অম্বেডকর কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে ২০১৬ সালে তাঁদের বিয়ে। সংসার আর দেড় বছরের ছেলে সৌম্যজিৎ, এত দিন এই নিয়েই ছিল তাঁর জগৎ। বয়স নেহাতই কম। ২৮ মার্চ সবে পঁচিশে পা দেবেন। তাঁর নাম ঘোষণার সময়ে মমতাও বলেছেন, ‘‘বাচ্চা মেয়ে, রাজনীতিতে একদম নতুন!’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘এখনও ওর প্রার্থী হওয়ার মতো বয়স হয়নি। মনোনয়ন যখন জমা দেবে, তখন তার জন্য প্রয়োজনীয় পঁচিশ বছর বয়স হয়ে যাবে।’’
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে এই তথ্যগুলি জানেন?
স্বামী খুন হওয়ার পরে সন্তানকে আঁকড়ে যখন শোক সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন রূপালী, ঠিক তখনই রাজনীতির ময়দানে ডাক পড়ল তাঁর। সপ্তাহ দুয়েক আগে কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবনে সত্যজিতের স্মরণসভায় এসে তৃণমূলের মহাসচিব তথা নদিয়ার পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রূপালী রাজনীতিতে আসতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে।’’ তা যে কত বড় ইঙ্গিত ছিল, তখন বোঝা যায়নি।
আরও পড়ুন: আসল প্রশ্ন করাই দেশভক্তি: প্রিয়ঙ্কা
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, সেই সময়েই রূপালীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত এক রকম পাকা করে ফেলা হয়েছিল। নদিয়ার প্রধান মতুয়া-মুখ সত্যজিতের স্ত্রীকে দিয়েই যে মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপিকে চাপে ফেলা যেতে পারে, এটা বুঝে নিতে শীর্ষ নেতাদের দেরি হয়নি। রূপালী অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “আমাকে দলের তরফে আগে থেকে কেউ কিছু বলেননি। আমি বেলা ৩টের পরে টিভি খুলে জানতে পেরেছি!”
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রূপালী প্রার্থী হচ্ছেন জানার পরেই বিকেলে বাড়িতে ভিড় জমতে থাকে। তিনি নিজে অবশ্য ছিলেন বিষণ্ণ, চুপচাপ। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, জোর করে চেপে রেখেছেন কান্না। কোলের বাচ্চা সামলে ভোটের ময়দানে লড়াই করতে হবে। সামলাতে পারবেন তো? নিচু গলায় রুপালী জবাব দেন, “কঠিন পরীক্ষা। দল যে ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সে ভাবেই এগোব।’’