রকমারি সব আবেদন, ঝকমারি তার বয়ান!
দিস্তে দিস্তে সেই কাগজে চোখ বোলাতে গিয়ে হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারছেন না মুর্শিদাবাদের পোলিং পার্সোনেল সেলের কর্মীরা।
কেউ লিখেছেন, ‘ছেলেটা আমাকে ছাড়া পড়তেই বসে না। আমি গেলে তো ওর বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
কারও বক্তব্য, ‘ক’দিন ধরেই ডান হাতে টনটনে ব্যথা। মনে হচ্ছে আমি প্রতিবন্ধী হয়ে যাব। যাব কী করে?’
বহরমপুরের এক শিক্ষক আবার আবেদনের সঙ্গে গুঁজে দিয়েছেন বিয়ের কার্ড—‘বিয়ের ব্যাপার তো! বিবেচনা করলে বড় উপকার হয়!’
পোলিং পার্সোনেলের এক কর্মীর টিপ্পনি, ‘এই আবেদনকারীদের অনেকেই যুদ্ধের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলেন। অথচ দেখুন, ভোটের ডিউটিতে যেতেই সমস্যা, অসুবিধা, অজুহাতের অন্ত নেই।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘কারও কারও সত্যিই সমস্যা আছে। কিন্তু অনেকেই যা কারণ দেখিয়েছেন তা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়। তবে শুধু আবেদনেই ছাড় মিলবে না। মেডিক্যাল বোর্ড, ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কমিটি সব দেখে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করেই যা করার করবে।’’
প্রতি বারই ভোটের সময় এমন আবেদন জমা পড়ে। তাতে কাজ না হলে কেউ কেউ নির্দল প্রার্থী হয়েও ভোটে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু এ বারে মুর্শিদাবাদে প্রার্থী হওয়ার থেকে আবেদনেই ঝোঁক বেশি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে মোট ২৭ হাজার ৪০০ কর্মীকে ভোটের কাজে তলব করা হয়েছে। ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত রাজ্য সরকারি ও সরকারের আওতায় থাকা সংস্থার কর্মীদের ভোটের প্রশিক্ষণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিল। আর সেই চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই ভোটের দায়িত্ব থেকে রেহাই পেতে তৎপর হয়েছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে
অব্যাহতি চেয়ে প্রায় তিন হাজার আবেদন জমা পড়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জনকে মেডিক্যাল বোর্ডের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে মেডিক্যাল বোর্ড ‘ফিট’ বলে শংসাপত্র দিয়েছে। ফলে তাঁদের শরীরকে মহাশয় বলেই যেতে হবে ভোটের কাজে। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘মেডিক্যাল বোর্ডে যাওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রে আসল ভোটকর্মীর বদলে অসুস্থ কাউকে পাঠিয়ে ‘আনফিট’ শংসাপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছিল। এ দিকে, বোর্ডে পাঠানো কাগজপত্রে কোনও ছবি না থাকায় চিকিৎসকদেরও কিছু করার থাকছিল না। সেই কারণে এ বার মেডিক্যাল বোর্ডে যাঁদের পাঠানো হচ্ছে তাঁদের আবেদনপত্রের সঙ্গে ছবি জুড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
অতএব, ভোট-যুদ্ধে সহজেই কিন্তু ছাড় মিলছে না!