রাধাবল্লভচকের কনচৌকি হাটের কর্মিসভায় তৃণমূল প্রার্থী দেব। শনিবার দেউলিয়ায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মাঝে সাত দিনের ফারাক। একটি কর্মিসভায় বেশ কিছু চেয়ার ফাঁকা থাকার ‘ক্ষতি’ সামলাতে এক দিনে ৬টি কর্মিসভা করলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব। তবে শনিবার দিনভরের সেই কর্মসূচিতেও উপচানো ভিড় হল কই!
গত শনিবার পাঁশকুড়ায় দেবের কর্মিসভায় মাঠ ভরেনি। তা নিয়ে বিস্তর শোরগোল হয়। তারপর এ দিন টানা কর্মিসভার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম সভা হয় প্রতাপপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ধুলিয়াপুরে প্রভাতী সঙ্ঘে ক্লাব লাগোয়া মাঠ। সেখানে ভিড় তেমন ছিল না। ফাঁকা মাঠের বেশিরভাগটাই দখল করেছিল নেতা-মন্ত্রী-পুলিশ-সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি। সকাল ৯টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও দেব পৌঁছন বেলা সওয়া ১১টায়। সভা ঘিরে বিতর্কও বেধেছে। সভার মাঠের পাশেই রয়েছে একটি বেসরকারি স্কুল। এ দিন সেখানে পরীক্ষা ছিল। ১১ টায় শুরু হয় পরীক্ষা। বক্স আর মাইকের কানফাটা শব্দের মধ্যেই পরীক্ষা দেয় ১৮২ জন ছাত্রছাত্রী। দেব সভাস্থলে পৌঁছনোর পর মাইকের শব্দ বেড়ে যায়, চঞ্চল হয়ে ওঠে পরীক্ষার্থীরা। শেষে স্কুলের মূল ফটক বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। ১১টা ৪০ মিনিটে সভাস্থল ছাড়েন দেব।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সভা রবিবার হবে বলে প্রথমে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ জানানো হয়, সভা হবে শনিবার। প্রধান শিক্ষক তরুণকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমাকে জানানো হয় ১১টার মধ্যে সভা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বাচ্চারা পরীক্ষা দিতে দিতে চঞ্চল হয়ে উঠছে।’’ তবে অভিযোগ জানাতে চাননি প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করেন। তাই এটুকু কষ্ট মেনেই নিলাম।’’ প্রতাপপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান স্বপন হাজরার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পাঁশকুড়া রেলগেটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় দেবের পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। স্কুলের পরীক্ষার বিঘ্ন হবে ভেবে তাড়াতাড়ি সভা শেষ করে দিই। অনিচ্ছাকৃত অসুবিধার জন্য আমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রতাপপুর ২ পঞ্চায়েতের আমড়াগোহাল গ্রামে দেবের দ্বিতীয় কর্মিসভাতেও তেমন ভিড় হয়নি। দুপুর দেড়টা নাগাদ দেব পৌঁছন রাধাবল্লভচকের কনচৌকি হাটের কর্মিসভায়। এখানে অবশ্য আগের দু’টির থেকে লোকজনের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। কর্মিসভায় দেব বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর সময় আমার রাজনীতি বুঝতেই সময় চলে গিয়েছে। আপনারা ভোট দেবেন উন্নয়নের নিরিখে। সাংসদ তহবিল খরচের নিরিখে আমি তিন নম্বর স্থানে রয়েছি। আপনাদের আশীর্বাদে আবার জিতলে সাংসদ তহবিলের একশো শতাংশ কাজ আমি উপহার দেব।’’
ভিতরে হচ্ছে পরীক্ষা। দরজার পাশেই দেবের সভার মাইক। নিজস্ব চিত্র
এ দিনও দেবের সঙ্গে ছিলেন বাবা গুরুপদ অধিকারী। দুপুরে কিছুটা বিশ্রামের পরে বিকেল ৪টে থেকে ফের প্রচার শুরু করেন দেব। গত ২৯ মার্চ বিজেপি-র প্রতিপক্ষ ভারতী ঘোষ যে সব এলাকায় প্রচার চালিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দফায় এ দিন সেই এলাকাতেও সভা করেন দেব। তবে বৃষ্টির জন্য নির্ধারিত ৮টির জায়গায় ৬টি সভাতেই থেমে যেতে হয় তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থীকে। দেবের দিনভরের কর্মিসভাকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘দেব নিজেই বললেন তিন বছর ধরে উনি রাজনীতি বুঝেছেন। এত সময় ধরে রাজনীতি বুঝলে কাজ কতটা করেছেন তা বোঝাই যাচ্ছে।’’
তবে দেবের এ দিনের একগুচ্ছ কর্মিসভাকে ‘সফল’ হিসেবেই দেখছে তৃণমূল। দলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান শা-এর দাবি, ‘‘কর্মিসভার ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে দেব এ বার বিপুল ভোটেই জিতবেন।"