প্রতীকী ছবি।
সচেতনতার আহ্বান আর আলগা রসবোধের ছোঁয়াটুকু স্বাগত। কিন্তু বিতর্ক এড়িয়ে চলতে হবে।
এমনতর শর্ত মেনেই ভোটের বাজারে পা ফেলছে গুটিকয়েক কর্পোরেট ব্র্যান্ড। কী ভাবে?
বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভোটে শরিক হতে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড কারবারি। বিজ্ঞাপনে তাদের নিজের আউটলেটেরই ছবি। কিন্তু ক্রেতারা যা চাইছেন, সেটা কিছুতেই মিলছে না। জবরদস্তি অন্য কিছু ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আনুষঙ্গিক বার্তা: ভোট না-দিলে পছন্দের বস্তু মায় পছন্দের রাষ্ট্র— কিছুই মিলবে না। বিজ্ঞাপনটি মনে করাচ্ছে, ২৮ কোটি ভারতীয় গত বার তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেননি।
ভোট না-দেওয়াটা কারও অধিকার হতে পারে না— বলিউডি তারকাদের এনে একটি পোশাক ব্র্যান্ডও তা প্রচার করছে। ভোটের নামে মন্দির-মসজিদ থেকে উদ্ভট সব প্রতিশ্রুতি, এমনকি হুমকিও শোনা যাচ্ছে তাদের বিজ্ঞাপনে। ভোটের কালির ছাপমাখা একটি আঙুল কিন্তু তাদের চুপ করিয়ে দিচ্ছে। আসল ক্ষমতা মানুষেরই হাতে— এমনই বার্তা নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রচার #ইউনাইটেডবাইভোট!
সরস ভঙ্গিতে এমন সচেতনতার প্রচারেই প্রধানত ভোট-বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করছে কিছু কর্পোরেট। তবু ভোটের বিজ্ঞাপনের দশা গোঁজ-কাঁটায় দীর্ণ কোনও ‘অতি স্পর্শকাতর’ কেন্দ্রের প্রার্থীর মতোই। ‘‘ব্র্যান্ড বিপণনে বেশি রাজনীতির গন্ধ লোকে সব সময় ভাল ভাবে নেয় না,’’ বললেন মুম্বইয়ের বিজ্ঞাপনী পেশাদার সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়। ‘‘তা ছাড়া ট্রোলিং বা কোণঠাসা করার জমানা! ব্র্যান্ডের ইমেজের পক্ষে ভোট সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ভাল না-ও হতে পারে।’’
কলকাতার প্রবীণ অ্যাডম্যান রাম রায়ও ‘বিপদ’-এর দিকগুলির কথা বলছেন। ‘‘রাতদিন ভোট-চর্চার জেরে ভোট-সচেতনতার বিজ্ঞাপন পানসেও লাগতে পারে। আবার ভোটের কথা বলে বিজ্ঞাপনে টাকা ঢাললে সেই কর্পোরেটের কাছে চাঁদা চাইতেও পারে কোনও রাজনৈতিক দল।’’
‘জাগো জাগো’ হাঁক পেড়ে কয়েক বছর আগে একটি বিজ্ঞাপনী সিরিজে কর্পোরেটের তরফে ভোট-সচেতনতার কথা প্রথম মেলে ধরেছিল একটি চা সংস্থা। ভোটার তালিকায় নাম তোলার উদ্যোগেও শামিল হয়েছিল তারা।
ভোট আর আইপিএল— দু’টোই চলছে একসঙ্গে। খবরে প্রকাশ, প্রথম সপ্তাহেই ৫৫৭ কোটি টাকার রেকর্ড বিজ্ঞাপন-বিনিয়োগ টেনে এনেছে আইপিএল। এর পাশে ভোটের ময়দানে কর্পোরেট-লগ্নি নগণ্য।
তবে ভোট সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা হতাশ নন। কলকাতার একটি হোশিয়ারি ব্র্যান্ড খারাপ রাস্তা, বিদ্যুৎ বা জলাভাবের মতো সমস্যা তুলে ধরছে বিজ্ঞাপনে। এ-সবের প্রতিকার হিসেবে ভোটের কথা বলে তাদের প্রচারে আঙুল তোলার ডাক। স্রেফ সোশ্যাল মিডিয়া তথা নেটনির্ভর প্রচারেই তারা ১৫ কোটি লোকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার দাবি করছে।
সুটকেসের একটি ব্র্যান্ডও তাদের বিজ্ঞাপনে ভোট উপলক্ষে ভিন্ শহরে কর্মরত তরুণের এক দিনের জন্য বাড়ি ফেরার গল্প বলছে। নাগরিকের কর্তব্য পালনের অনুষঙ্গ এবং ঝটিকা সফর মিলিয়ে সুটকেসের জয়জয়কার। ভোটের দিনগুলোয় গুগলের পাতায় পর্যন্ত ভোটের কালি দেওয়া উদ্ধত তর্জনীর ছবি।