—ফাইল চিত্র।
বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও, কমিশনের ‘চৌকিদার’ হিসেবে সেখানেও মাইক্রো অবজার্ভার, ওয়েবকাস্টিং, সিসি ক্যামেরা বা ভিডিয়োগ্রাফার রাখার সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন সদন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্তকে শুক্রবার চিঠি লিখে কমিশনের এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছেন। সিদ্ধিনাথ রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনার ‘নোডাল’ অফিসার। সাত দফার লোকসভা নির্বাচন পর্বে কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে, সেই প্রসঙ্গে সিইও জানিয়েছেন, শুধু সশস্ত্র পুলিশকর্মী থাকবেন, এমন বুথেই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী যে-সব বুথের দায়িত্বে থাকবে, সেখানেও বাড়তি নজরদারি চলবে।
এত দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে সেই বুথে ক্যামেরা, ভিডিয়োগ্রাফি বা মাইক্রো অবজার্ভার রাখা হত না। এ বার কেন? কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এসেছিল। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হচ্ছে।’’
কমিশন রাজ্য পুলিশকে এ-ও জানিয়েছে, প্রতি পর্বেই সমস্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও কমিশনের এক কর্তা জানান, লোকসভা ভোটে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয়। সারা দেশে ভোট হচ্ছে। সেই জন্য এত বাহিনী পাওয়া মুশকিল। তবে এ রাজ্যের প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা যায়, তাতে অন্তত ৮০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। এ ছাড়া স্পর্শকাতর বা অতি স্পর্শকাতর বুথে আবশ্যিক ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে।
তবে সিইও রাজ্য পুলিশকে জানিয়েছেন, কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর পূর্ণ ব্যবহার চায়। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যাতে ভোটের সময় কোথাও বসিয়ে রাখা না-হয়, প্রতি কোম্পানি থেকে ৯ সেকশন বা ৭২ জন জওয়ানকেই যাতে ভোটের কাজে ব্যবহার করা হয়, পুলিশকে তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের সময় কী কী কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে? কমিশন রাজ্যকে জানিয়েছে, প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বাহিনী রাখতে হবে। মোবাইল পেট্রোলিংয়েও যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার জরুরি। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘গোলমালের এলাকা’য় রুট মার্চ করবে বাহিনী। ভোটারদের মনের ভয় কাটাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করতে হবে। বাহিনীর রুট মার্চ শুধু পুলিশ নয়, নিয়ন্ত্রণ করবেন সিনিয়র আমলারাও। জেলাশাসকের কাছে প্রতিদিন এ বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে পুলিশ সুপারকে। তা কমিশনে পাঠাবেন জেলাশাসক।
এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে থাকবে সমস্ত স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা। রাজ্যের ৫৫টি ভোটগণনা কেন্দ্রে ৪৮ কোম্পানি বা ৪৮০০ বাহিনী নিরাপত্তা দেবে। ভোটের পর ইভিএমের প্রহরাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই রাখার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
ভোটবন্দি ইভিএম রাখার জায়গার নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সব চেয়ে বেশি। ডিএম-দের বলা হয়েছে, প্রথমেই স্ট্রং রুমের প্রহরা ঠিক করতে হবে। ভোটের আগের দিন থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অশান্তির খবর পেলে তা সামলাতে কুইক রেসপন্স টিম(কিউআরটি)-এ কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা আবশ্যিক করেছে কমিশন। এর পর ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের জন্য বাহিনী পাঠাবেন জেলাশাসকেরা। তবে পুলিশ পর্যবেক্ষক ও সাধারণ পর্যবেক্ষকের অনুমোদন ছাড়া এই পরিকল্পনা যে বাস্তবায়িত হবে না, তাও জানিয়েছে কমিশন। এ-ও জানিয়েছে, ভোটের কাজে কোনওভাবেই অস্থায়ী বা স্থায়ী হোমগার্ড, এনভিএফ এবং কোনও ধরনের চুক্তির পুলিশ (সিভিক বা গ্রিন পুলিশ)’কে ব্যবহার করা যাবে না।