‘এলিমেন্টারি’: সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম-বচন।
সত্যান্বেষী! ব্যোমকেশ বক্সী নন, এক্কেবারে শার্লক হোমস। তা-ও শার্লকরূপী হাল আমলের ব্রিটিশ অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। তৃণমূলের প্রচারের পাল্টা দিতে ভোট ময়দানে এমন ‘সত্যান্বেষী’কে নামিয়েছেন সিপিএম ‘সমর্থকেরা’। আর তা দেখে, তৃণমূলের কটাক্ষ, সিপিএমের ‘বিলিতি’ নীতির কারণেই বোধহয় দীপক চট্টোপাধ্যায়, ব্যোমকেশ, ফেলু মিত্তিরদের ভূমিতে বাঙালি গোয়েন্দা কম পড়েছে!
সম্প্রতি দুর্গাপুরের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মোবাইলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এই সত্যান্বেষীর ছবি। ছবির মাথায় নাওতো সিরোগানে (একটি জনপ্রিয় ভিডিয়ো গেমের তরুণ গোয়েন্দা চরিত্র) শুনছে রাজ্যের শাসক দলের নানা প্রচার। আর এরই পাল্টা বামাচারী ‘সত্য-বচন’ শোনাচ্ছেন শার্লক।
যেমন, একটি ছবিতে নাওতোর পর্যবেক্ষণ, ‘অণ্ডালের কাজী নজরুল এয়ারপোর্ট তো তৃণমূল সরকারের সাফল্য’। ছবির তলায় সত্যান্বেষী শার্লকরূপী কাম্বারব্যাচের অনুসন্ধিৎসু বচন, ‘জমির ব্যবস্থা থেকে বিনিয়োগকারী নির্বাচন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন, সবই হয়েছে ষষ্ঠ বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে। তৃণমূল সরকার শুধু উদ্বোধন করে নিজেদের সাফল্য বলে চালাচ্ছে।’— এমনই বহু ছবিতে কোথাও নতুন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৈরির কৃতিত্ব দাবি, কোথাও জেলার নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, এমএএমসি কারখানা বন্ধ-সহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূলকে বিঁধছে সিপিএম সমর্থকদের এই ‘হোমসিয়ানা’।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূল অবশ্য এই প্রচারকে নেহাত ‘চটকদার অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের রসিকতা, ‘‘বাংলায় দাঁড়িয়ে ওঁরা চিরকালই নিকারাগুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। বাঙালি গোয়েন্দা ছেড়ে তাই শার্লক-শরণে ওঁরা। এ সবই হাইলি সাসপিশাস! মানুষ সবই জানেন।’’
কিন্তু, নাগরিকদের একাংশেরই প্রশ্ন, ‘সত্যান্বেষী’ হিসেবে ব্যোমকেশ ছেড়ে শার্লক কেন? ২১১বি বেকার স্ট্রিটের বাসিন্দাটির চরিত্রে বারবার ফিরে এসেছেন বেসিল রাথবোন, রজার ম্যুর-সহ বহু অভিনেতা। তাই শার্লককে যখন বেছে নেওয়া হল, সে ক্ষেত্রে তাঁর ছবি কাম্বারব্যাচের আদলেই বা কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও।
এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই ‘সত্যান্বেষী সিরিজে’র প্রধান লক্ষ্য, নবীন প্রজন্ম। এই প্রজন্ম সাম্প্রতিক কয়েক বছরে একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে শার্লক-সিরিজ প্রায় গিলেছে। সেখানে শার্লক চরিত্রে মগজাস্ত্র আর সময়োপযোগী প্রেক্ষাপট, আধুনিক প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছেছেন কাম্বারব্যাচও। শার্লকরূপী সেই কাম্বারব্যাচে ভর করে ‘তৃণমূলের যাবতীয় কৃতিত্ব আসলে যে বাম আমলেরই ফসল’, এটা যদি নবীন প্রজন্মকে বোঝানো যায়, তা হলেই কেল্লা ফতে, মনে করছেন সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমানের এক শীর্ষ নেতা।
তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার হোমস-শরণে থেকেই বলেন, ‘‘দলীয় ভাবে আমরা এই প্রচার করছি না। সাধারণ মানুষ, সমর্থকেরা তৃণমূলের অপপ্রচারের ‘এলিমেন্টারি’ সত্যটা মানুষকে জানাচ্ছেন।’’