পথে-প্রচারে: দমদম কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যের সমর্থনে রোড শো-তে সীতারাম ইয়েচুরি। বৃহস্পতিবার বরাহনগরে। নিজস্ব চিত্র
পরস্পরকে তীব্র নিশানা করে লোকসভা নির্বাচনের গোটা প্রচার-পর্ব পার করে দিল বিজেপি এবং তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রীর দ্বৈরথের খবরেই তপ্ত ভোটের আবহ। কিন্তু এই দ্বিমাত্রিক প্রচারের মধ্যেও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকলে শেষ পর্বে বামেরা চমকে দিতে পারে বলে দাবি সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের। সপ্তম ও শেষ দফার ভোটের প্রচারের শেষ লগ্নে ভিড় দেখে তাঁরা আশাবাদী যে, বাংলায় বামেদের ঝুলি এ বার শূন্য থাকবে না!
নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নির্দেশে শেষ দফার ভোটের আগে প্রচার সাঙ্গ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার রাতেই। দিনভর সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, নীলোৎপল বসু, সুশান্ত ঘোষ-সহ সিপিএমের সব নেতাই দৌড়ে বেড়িয়েছেন কলকাতা ও আশেপাশের এলাকার প্রচারে। আগামী রবিবার যে ৯টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট, তার মধ্যে যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার ও দমদমের লড়াইয়ে বিশেষ করে নজর দিয়েছে সিপিএম। সুষ্ঠু ভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ মানুষ পেলে ওই কেন্দ্রগুলিতে অনেক চেনা হিসেব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে বলে দাবি ইয়েচুরি, সূর্যবাবুদের।
তবে ডায়মন্ড হারবারে শাসক দল তৃণমূল কোন কোন এলাকায় বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে জড়ো করছে, তার তালিকা এ দিনই জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে জমা দিয়ে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিপিএম জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। কেন্দ্রীয় বাহিনী বহু এলাকায় ‘রুট মার্চ’ শুরু করেনি বলেও কমিশনকে জানিয়েছেন তিনি। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর অভিযোগ, তৃণমূল ও বিজেপি— দুই শাসক দলই বাইরের লোকজন আনার চেষ্টা করছে। রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের উপরে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কমিশন নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
উত্তর কলকাতার তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিট-এ প্রকাশ কারাট।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যের সমর্থনে এ দিন সকালে বরানগর থেকে সোদপুর পর্যন্ত রোড-শো করেন ইয়েচুরি। পুলিশের অনুমতি না থাকায় তিন দিন আগে রোড-শো বাতিল হয়েছিল। কিন্তু এ দিন রোড-শো ঘিরে বি টি রোডে উপচে পড়েছিল ভিড়। মিছিল যেমন ছিল চোখে পড়ার মতো, তেমনই রাস্তার ধারে জড়ো হয়েছিল বহু মানুষ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, ‘‘সামনে বিজেপি এবং তৃণমূল দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালের মতো। প্রচারেও তেমনই দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এই দেওয়াল ভেদ করেই মেসির মতো চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বামফ্রন্ট!’’
অন্তিম পর্বের ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা দাবি করছেন, তিনশোর বেশি আসন নিয়ে তাঁরা ক্ষমতায় ফিরছেন। কলকাতা উত্তরের প্রার্থী কনীনিকা বসুর (ঘোষ) সমর্থনে তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটের সভা থেকে এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য কারাট পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিজেপি আর ক্ষমতায় ফিরবে না। নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হবে। নতুন সরকারের জন্য বিকল্প কর্মসূচি একমাত্র বামেদের হাতে আছে। বিকল্প সরকারে বামপন্থীদের ভূমিকা থাকবে।’’ কেন্দ্রে ‘জনহিতৈষী’ সরকার গঠনের লক্ষ্যে বামপন্থীদের সংসদে পাঠানোর আর্জি জানান তিনি।
কারাটের অভিযোগ, মোদীরা এখন আর প্রচারে পাঁচ বছরের কাজের কথা বলছেন না। কারণ, বলতে গেলে বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি, কৃষকের সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি থেকে ধরতে হবে! মোদী-শাহেরা তাই এখন মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরিতে মরিয়া। কারাটের কথায়, ‘‘বাংলায় গত ৭-৮ বছর ধরে বামপন্থী এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আক্রমণ করে তৃণমূলই বিজেপির উঠে আসার জমি তৈরি করেছে। এই দুই দলকেই পরাস্ত করতে হবে।’’