Loksabha Election 2019

জোটের বার্তা, তবু বিধি বাম, চারটি আসন ছেড়ে প্রার্থী দিল বামফ্রন্ট, পাল্টা কটাক্ষ কংগ্রেসের

বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার সম্ভাবনায় প্রায় জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক শিবিরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৩:০০
Share:

কংগ্রেসের উদ্দেশে পরিষ্কার আহ্বান জানিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে রেখেছেন, ইতিবাচক সাড়া এলে তাঁরা অন্যান্য আসনের প্রার্থী তুলে নেওয়া বা বদলের কথাও ভাবতে রাজি। ছবি: সংগৃহীত।

ভেঙে যাওয়া জোটের সম্ভাবনাকে জিইয়ে তুলতে ফের বার্তা দিল সিপিএম। পরিবর্তে কংগ্রেস ফিরিয়ে দিল আক্রমণ!

Advertisement

সিপিএমের জেতা দুই কেন্দ্র-সহ রাজ্যের ১১টি আসনে সোমবার রাতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এআইসিসি। বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার সম্ভাবনায় তখনই প্রায় জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু তার পরেও মঙ্গলবার কংগ্রেসের জেতা চারটি আসন ছেড়ে রেখে রাজ্যের বাকি ১৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। আগেই তারা ২৫টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। কংগ্রেসের উদ্দেশে পরিষ্কার আহ্বান জানিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়ে রেখেছেন, ইতিবাচক সাড়া এলে তাঁরা অন্যান্য আসনের প্রার্থী তুলে নেওয়া বা বদলের কথাও ভাবতে রাজি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র অবশ্য পত্রপাঠ জানিয়ে দিয়েছেন, বামেদের কাছ থেকে তাঁরা ‘করুণা’ চান না! রাজ্যের ৪২টি আসনেই তাঁরা লড়তে চান।

প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ শনিবার থেকেই বামেদের সঙ্গে জোটের রাস্তায় যেতে বেঁকে বসেছিলেন। দীপা দাশমুন্সি, শঙ্কর মালাকারেরা সিপিএমের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বামেদের ‘দম্ভ ও অহঙ্কার’ দেখতে পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দিল্লির কাছে দরবার করেছেন সোমেনবাবু। কিন্তু এত সবের পরেও বিমানবাবুরা চার আসন আপাতত ছেড়ে রাখার বার্তা দিয়ে ‘কুশলী চাল’ দিয়েছেন বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন এআইসিসি নেতারা। বাংলার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা গৌরব গগৈ ও সহ-পর্যবেক্ষক বি পি সিংহ এ দিনের ঘটনার রিপোর্ট নিয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিমানবাবুরা সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পরেও সোমেনবাবুরা জোটের আলোচনায় আর ঢুকতে রাজি না হওয়ায় বিস্মিত তাঁরাও। দলের অন্দরে অনেকেরই মত, বিজেপি এবং সেই সঙ্গে তৃণমূলকে রুখতে তারা ‘আন্তরিক’, এই বার্তা বামেরা সামনে রাখতে পারছে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের মনোভাবে জনমানসে বার্তা যাচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়েও তারা ‘নমনীয়তা’ দেখাচ্ছে না।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বামেরা প্রথমে ২৫ এবং এ দিন ১৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পরে এখনও পর্যন্ত ১১ আসনে তাদের সঙ্গে কংগ্রেসেরও লড়াই থাকছে।বিমানবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের মোকাবিলায় সব ভোটকে এককাট্টা করতে আমরা চেষ্টার ত্রুটি করব না। কংগ্রেসের চার আসনে প্রার্থী দিচ্ছি না। কংগ্রেস ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দিলে আমরা নতুন তালিকা তৈরি করতে বা তালিকায় পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। মুখোমুখি বসে বা টেলিফোনে আলোচনা ফের শুরু করতে আমরা তৈরি।’’

জনসংযোগ: প্রচারের ফাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী মৌসম নুর। মঙ্গলবার মালদহের গাজলে। ছবি: তথাগত সেনশর্মা

বিমানবাবু দেখিয়েছেন, সাম্প্রতিক কালেনানা নির্বাচন ও উপনির্বাচনে কয়েক শতাংশ মাত্র ভোট পেয়েছে— এমন আসনও কংগ্রেস দাবি করছে। উভয় পক্ষের জেতা আসনে কেউ কারও বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে না, এই পারস্পরিক বোঝাপড়াও কংগ্রেস ভেঙেছে। কিন্তু এ দিনের বার্তার পরেওকংগ্রেসের সাড়া না এলে কি ওই চার আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন? বিমানবাবুর জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই দিতে পারি। তবে আমরা অপেক্ষা করছি। মানুষকে ভুল বার্তা দিতে চাই না। কংগ্রেস সাড়া দিলে সময়টা ২৪ ঘণ্টার থেকেও বাড়বে। আলোচনায় ওঁরা আসুন না!’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবু অবশ্য দিল্লি থেকে বলেছেন, ‘‘বামেদের শর্তে, দলের সম্মান খুইয়ে জোট করতে আমরা রাজি নই। গত বার লোকসভা ভোটে ওরা দু’টো, আমরা চারটে আসন পেয়েছিলাম। আমাদের দাবিই তো আগে থাকা উচিত, ভোটের শতাংশ দেখিয়ে কী হবে?’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বামেদের করুণার কোনও দরকার আছে বলে মনে করি না!’’

যার জবাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘করুণা বা অনুকম্পার কথা নয়। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দায়বদ্ধতাকে কেউ দুর্বলতা মনে করলে মুশকিল।’’

রাতের খবর, বামেদের চাল সামলানোর জন্য কংগ্রেসও আসানসোল, ডায়মন্ড হারবারের মতো গোটাপাঁচেক আসনে প্রার্থী না দিতে পারে। তবে দলের ভিতরেই প্রশ্ন, বামেদের জেতা আসনে প্রার্থী দিয়ে ‘হারা’ আসন ছাড়ার কী মানে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement