পাশে: ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে প্রচারে বিমান বসু। রবিবার কাঁচড়াপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
ঘটনা গত বছরের ছটপুজোর সময়ে। ভক্তদের কথা ভেবে ওই পুজোর দু’দিন আতপুর বাজারে মাছ, মাংসবিক্রেতাদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল অর্জুন সিংহের নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। অনেকের আপত্তি থাকলেও তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানের প্রতাপের চোটে রা কাড়েননি। এ বার ভোটের সময়ে সেই দোকানিরাই তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএমকেও পতাকা লাগানোর সুযোগ দিয়েছেন।
শুধু এই একটা বাজারই নয়। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েই এ বার মহল্লায় মহল্লায় প্রচারে ঢুকতে পেরেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। বিগত কয়েক বছর যে সব অঞ্চলে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় দখল হয়ে ছিল, রাজনৈতিক কর্মসূচি লাটে উঠেছিল, সে সব এলাকাতেও এ বার চোখে পড়ছে বাম মিছিল। একের পর এক চটকল, বন্ধ কারখানার গেটের সামনে সভা করছেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়। কয়েক মাস আগে এই লোকসভা এলাকার মধ্যেই নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন তিনি। অথচ এ বার তাঁর প্রচারে সাড়া দেখে সংগঠন কিছুটা হলেও গুছিয়ে নেওয়ার আশা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। যা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে।
ব্যারাকপুর ও দমদম, শিল্পাঞ্চলের এই দুই কেন্দ্রে তাঁরা বিশেষ নজর দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। দমদমের প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য ও ব্যারাকপুরের গার্গী তাই কারখানার গেটে গেটে সভা করছেন, শ্রমিক মহল্লায় পদযাত্রা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গত বার নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিজেপির জমানায় এই শিল্পাঞ্চল-সহ গোটা দেশেই শিল্পের অবনতি হয়েছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারও এই দিকে নজর দেয়নি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দুই কেন্দ্রের মধ্যে ব্যারাকপুরের পরিস্থিতি এ বার একটু অন্য রকম। ভোটের আগে দল বদলে অর্জুন এখন বিজেপির প্রার্থী। অর্জুনের বাহিনী পতাকা বদলে নিতেই এলাকার কিছু ক্লাব ‘দখলমুক্ত’ হয়েছে। অর্জুন যেমন ছেলে-ভাইপোকে নিয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন, তেমনই আবার নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক, অর্জুনের আত্মীয় সুনীল সিংহের ছেলে গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ের বাবা মুকুল রায় আবার অনেক দিন ধরেই বিজেপি। কে কোন দিকে, এই নিয়ে চর্চার মধ্যেই শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে সরব হচ্ছে বামেরা। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের হিন্দিভাষী প্রার্থীর মাঝে বাঙালি মুখকে নিয়ে বাংলাভাষী এলাকায় কিছু উৎসাহও আছে।
কিন্তু এক দিকে দীনেশ ত্রিবেদী এবং অন্য দিকে অর্জুন— এমন ওজনদার নাম থাকতে তাঁরা কি আদৌ কিছু করতে পারবেন? গার্গীর বক্তব্য, ‘‘ওঁরা হেভিওয়েট হতে পারেন। কিন্তু এলাকার সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে ওঁদের কখনও দেখা গিয়েছে? বরং, ১০ বছর ধরে দুষ্কৃতী-রাজ চলেছে। মানুষ বহু জায়গায় ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা সেই অবস্থা থেকে মুক্তি চান।’’
তৃণমূলের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী বরাবরের মতোই বলছেন, ‘‘গণতন্ত্রে সকলে নিজেদের বক্তব্য জানাবে, এটাই স্বাভাবিক। মানুষের সমর্থনেই আমরা জিতব।’’ অর্জুনের আবার দাবি, তৃণমূলকে এখানে ‘শিক্ষা’ দেবে বিজেপিই। সিপিএমের ভবিষ্যৎ নেই। আর রোড-শো করতে গিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্য, ‘‘কাকের বাসা থেকে কেমন ভাবে কোকিল ছানা বেরোয়, এই এলাকার মানুষ দেখছেন!’’