যে ২৫ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে, তার মধ্যে গত বারের জেতা দু’টি ধরে সিপিএমের প্রার্থী আছে ১৬ আসনে।
পছন্দের আসন এবং সংখ্যা মনঃপূত না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে সমঝোতার রাস্তা প্রায় বন্ধ করতে চেয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। সেই মর্মেই তারা রিপোর্ট পাঠিয়েছিল এআইসিসি-কে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু শুক্রবার আবার আলোচনার দরজা খুলে দিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যে ২৫টি আসনের জন্য বাম প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করলেন তিনি। বাকি ১৭টি আসনের কতগুলিতে কংগ্রেস লড়বে আর বামেরা ক’টায় প্রার্থী দেবে, তা নিয়ে রাতেই ফের কথা বলেছেন সোমেনবাবু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
কংগ্রেসের জন্য দরজা খুলতে গিয়ে আবার দুই বাম শরিকের ক্ষোভের কারণ হয়েছেন বিমানবাবু! প্রকাশিত ২৫ প্রার্থীর তালিকায় তিন শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই ও আরএসপি তিনটি (বহরমপুর ছেড়ে) করে আসন পেয়েছে। কিন্তু তালিকার সঙ্গে দেওয়া বিবৃতিতে বিমানবাবু বলেছেন, পুরুলিয়ায় ফ ব এবং বসিরহাটে সিপিআই প্রার্থী দিচ্ছে। তবে কংগ্রেস মনে করলে তারাও ওই দুই আসনে প্রার্থী দিতে পারে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান কেন বাম প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে প্রার্থী দেওয়ার বার্তা প্রকাশ্যে দিতে গেলেন, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ফ ব ও সিপিআইয়ের দুই রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে ২৫ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে, তার মধ্যে গত বারের জেতা দু’টি ধরে সিপিএমের প্রার্থী আছে ১৬ আসনে। কঠিন লড়াইয়ে রাজনৈতিক সৈনিকদের উপরেই আস্থা রেখেছে বামেরা। এই ২৫ জনের মধ্যে লোকসভা ভোটে প্রথম বার লড়ছেন ১১ জন। মহিলা মুখ চার। অলোকেশ দাস, রণেন বর্মণ, শক্তিমোহন মালিক, বীর সিংহ মাহাতো, সুনীল খাঁয়ের মতো প্রাক্তন সাংসদদেরও এ বার প্রার্থী করা হয়েছে।
বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা
• কোচবিহার, গোবিন্দ রায় (ফব)
• আলিপুরদুয়ার, মিলি ওরাওঁ (আরএসপি)
• জলপাইগুড়ি, ভগীরথ রায় (সিপিএম)
• রায়গঞ্জ, মহম্মদ সেলিম (সিপিএম)
• বালুরঘাট, রণেন বর্মণ (আরএসপি)
• মুর্শিদাবাদ, বদরুদ্দোজা খান (সিপিএম)
• রানাঘাট, রমা বিশ্বাস (সিপিএম)
• বনগাঁ, অলোকেশ দাস (সিপিএম)
• দমদম, নেপালদেব ভট্টাচার্য (সিপিএম)
• বারাসত, হরিপদ বিশ্বাস (ফব)
• বসিরহাট, পল্লব সেনগুপ্ত (সিপিআই)
• জয়নগর, সুভাষ নস্কর (আরএসপি)
• ডায়মন্ড হারবার, ফুয়াদ হালিম (সিপিএম)
• যাদবপুর, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (সিপিএম)
• কলকাতা দক্ষিণ, নন্দিনী মুখোপাধ্যায় (সিপিএম)
• উলুবেড়িয়া, মাকসুদা খাতুন (সিপিএম)
• হুগলি, প্রদীপ সাহা (সিপিএম)
• আরামবাগ, শক্তিমোহন মালিক (সিপিএম)
• ঘাটাল, তপন গঙ্গোপাধ্যায় (সিপিআই)
• মেদিনীপুর, বিপ্লব ভট্ট (সিপিআই)
• পুরুলিয়া, বীর সিংহ মাহাতো
• বিষ্ণুপুর, সুনীল খাঁ (সিপিএম)
• বর্ধমান পূর্ব, ঈশ্বরচন্দ্র দাস (সিপিএম)
• বর্ধমান দুর্গাপুর, আভাস রায়চৌধুরী (সিপিএম)
• বীরভূম, রেজাউল করিম
(প্রতীক কী, চূড়ান্ত নয়)
বামেদের এ দিনের তালিকায় নেই উত্তর কলকাতা, হাওড়া, কৃষ্ণনগর, শ্রীরামপুর, মথুরাপুর, ব্যারাকপুরের মতো আসন। ওই আসনগুলিতে কংগ্রেসের দাবি আছে। আবার অন্য কিছু সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা এবং দলের অন্দরের কিছু সমস্যার জন্য নাম ঘোষণা হয়নি ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, তমলুক বা কাঁথি আসনে। অবশিষ্ট ১৭-র মধ্যে কয়েকটি আসনে বাম-কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেও প্রার্থী থাকতে পারে। আর কংগ্রেস রফা না করলে ১৭টিনামই ঘোষণা করবে বামফ্রন্ট।
সোমেনবাবুকে এ দিন ফোন করে বিমানবাবু জানিয়ে দেন, ২৫টি আসনের প্রার্থী তালিকা তাঁরা ঘোষণা করছেন।কংগ্রেস দ্রুত তাদের অবস্থান ঠিক করুক। বাকি যা চূড়ান্ত করার, সোমবার পরবর্তী বামফ্রন্টের বৈঠকে তা করে ফেলা হবে। বিবৃতিতে বিমানবাবু বলেছেন, বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি আটকাতেই তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা চালাচ্ছেন। আর সোমেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বামফ্রন্ট তার কাজ করেছে, আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।’’ বাম তালিকা সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সংযোজন, ‘‘আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। বিমানবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও দরজা বন্ধ করার কথা বলেননি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নির্বাচন কমিটির বৈঠক বসছে আজ, শনিবার।