ট্রান্স-টিজ়িং রোধে আইনের কথা ভোটের প্রচারে

এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে কিছুটা হলেও সামনের সারিতে উঠে এসেছে গড়পড়তা মেয়ে-পুরুষের বাইরের এই তৃতীয় স্বর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০২:১১
Share:

পাশে: যৌন সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আলোচনায় যাদবপুর কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

এ দেশে তথাকথিত নিচু জাত বা জনজাতির প্রতি বৈষম্য বিরোধী আইনের আদলে যৌন সংখ্যালঘুদেরও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

Advertisement

সোমবার দুপুরে একটি প্রাক্-ভোট প্রচারসভায় এ কথা বলেই যৌন সংখ্যালঘু তথা সমকামী-রূপান্তরকামী জনতার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করলেন যাদবপুর কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বিকাশবাবু। এ বার লোকসভা ভোটের প্রচারে কিছুটা হলেও সামনের সারিতে উঠে এসেছে গড়পড়তা মেয়ে-পুরুষের বাইরের এই তৃতীয় স্বর। একদা শ্রেণি সংগ্রামের আতস কাচে সব কিছু দেখতে অভ্যস্ত বামপন্থীরা সমকামী-রূপান্তরকামীদের মতো মানুষের যৌনতার অধিকার ও অন্য দাবিসমূহ নিয়ে কার্যত নিস্পৃহ ছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও অবস্থান বদলেছেন। তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের স্বীকৃতি প্রদানকারী নালসা রায় বা ৩৭৭ ধারা হটিয়ে সমলিঙ্গের যৌন সম্পর্ককে স্বীকৃতির পরে এটাই প্রথম ভোট। বিজেপি-কংগ্রেস পর্যন্ত তাদের ইস্তাহারে রূপান্তরকামীদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছে। তবে বিভিন্ন দলের মধ্যে এ বিষয়ে সবচেয়ে জোরালো স্বর সিপিএমের।

এই অবস্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলকাতা তথা লাগোয়া এলাকার কেন্দ্রগুলিতে যৌন সংখ্যালঘুদের মধ্যেও আলাদা ভাবে ভোটপ্রচার করছে তারা। এ দিন দুপুরে সন্তোষপুরের একটি বাড়িতে যেমন, এক ঝাঁক রূপান্তরকামী-সমকামী মানুষের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী বিকাশবাবু। সেখানে এক ঝাঁক প্রশ্নেরও মুখোমুখি হন তিনি। দুই রূপান্তরকামী নারী সমাজকর্মী অচিন্ত্য বা মেকআপ-শিল্পী অরুণিমার মতো অনেকেরই প্রশ্ন, রূপান্তরকামী মেয়ে বা পুরুষকে উত্ত্যক্ত করলে ইভ-টিজ়িংয়ের মতো ট্রান্স-টিজ়িংয়ের আইন কি প্রয়োগ করা সম্ভব? রূপান্তরকামী পুরুষ বা ট্রান্সম্যান তৃষাণ আবার বললেন, ‘‘স্কুলশিক্ষিকা মেয়েদের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের মতো পোশাক পরা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও গ্রামে গ্রামে অলিখিত ফতোয়া জারি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শরীরে মেয়ে, কিন্তু মননে পুরুষ যাঁরা, তাঁরা কী করবেন?’’ বিকাশবাবু এই প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত বা রূপান্তরকামী, এবং কিছু ক্ষেত্রে সমকামীদের সুরক্ষার জন্য আইনের দরকার। এসসিএসটি বা তফসিলভুক্ত জাতি, জনজাতিদের মতো সমকামী-রূপান্তরকামীদেরও নাগরিক অধিকার দিতে আইন দরকার।’’

Advertisement

এর আগে সিপিএমের ইস্তেহারে রূপান্তরকামী বা সমপ্রেমী কোনও জুটির ক্ষেত্রে বিয়ের আদলে সামাজিক স্বীকৃতির কথা বলা হয়েছিল। এ দিনও তাঁদের সম্পত্তি বা সন্তান দত্তক নেওয়ার মতো অধিকারগুলি নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। ধরা যাক, কোনও পুরুষ ও তাঁর সঙ্গিনী রূপান্তরকামী নারী— তাঁরা কী করবেন? অবিবাহিত মেয়েরা বাবার পেনশনের টাকা পান। রূপান্তরকামী কন্যাটির ক্ষেত্রে কী হবে! এ দেশে এখনও ৯৮ শতাংশ রূপান্তরকামী মেয়ে-পুরুষই কৈশোরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হন। অনেকেই হিজড়ের খোলে যোগ দিতে বাধ্য হন। প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের সুরক্ষার দিকগুলি নিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় চিন্তাভাবনা কতটা সম্ভব? বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আমার দলই সবার আগে এ বিষয়গুলি ইস্তেহারে রাখার কথা বলেছে। ভোটের পরে সংসদে বা সংসদের বাইরে সিপিএম, এই লক্ষ্যগুলি ধরেই এগোবে।’’

বিকাশবাবুর আগে সিপিএমের তরফে কলকাতা উত্তরের প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ, কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, দমদমের প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যেরা সমকামী-রূপান্তরকামীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে, সিপিএম কেন মহিলা সমিতি বা বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের আদলে এই গোষ্ঠীর অধিকার সংক্রান্ত মঞ্চ গড়ছে না? বিকাশবাবু বলেন, ‘‘সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার! কিন্তু সমকামী-রূপান্তরকামীদের প্রতি বিদ্বেষ সমাজের নানা স্তরে অজ্ঞতা ও পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই গড়ে ওঠে। সেগুলি কাটিয়ে উঠতে হবে। আইনি রক্ষাকবচও এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement