কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। পল্লব সেনগুপ্তের অ্যালবাম থেকে নেওয়া ছবি।
তিনি চোখে চোখ রেখে কথা বলে এসেছেন ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে।
উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের ঠাকুরদা কিম ইল সাং-কে তিনি মুখের উপর বলেছিলেন, পিয়ংইয়ং-এ বিশ্ব ছাত্র-যুব উৎসব আয়োজন করতে হলে শহরের সমস্ত গির্জা খুলে দিতে হবে। তাঁর ঝুলিতে উগো চাভেসের সঙ্গে আড্ডার অনেক গল্প। ভেনেজ়ুয়েলা, চিন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মস্কো বা বুদাপেস্টের অলিগলি তাঁর নখদর্পণে। কিন্তু বসিরহাট?
পল্লব সেনগুপ্তের কাছে বসিরহাট অচেনা মাঠ। কারণ, গত দু’দশক ধরে তিনি দিল্লিতে, সিপিআইয়ের সদর দফতর অজয় ভবনে, আন্তর্জাতিক দফতরের দায়িত্বে। দলের দুর্দিনে সেই পল্লব সেনগুপ্তকেই দিল্লি থেকে বসিরহাটে নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করছে সিপিআই। তৃণমূলের তারকা-প্রার্থী নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্বভাব রসিক পল্লব নিজে যাকে ‘বসিরহাটে উল্কাপাত’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মানছি, কঠিন লড়াই। তবে বিশ্বের মাটিতে এত লড়াই করেছি, বসিরহাটেও করব।’’
এক সময় এআইএসএফ-এর রাজ্য সম্পাদক ছিলেন। সে আশির দশকের কথা। তার পর থেকেই তিনি দিল্লিতে। লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা দূরে থাক, কোনও দিন ছাত্র সংসদের ভোটেও লড়েননি। তবে আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠন বা যুব সংগঠনের শীর্ষ পদে ছিলেন। বিশ্বের ১১৯টি দেশে ঘুরেছেন। বিশ্বের এমন কোনও নেতা নেই, যাঁর সঙ্গে তাঁর মোলাকাত হয়নি। বাড়ি উত্তরপাড়ায় হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ কলকাতা বা দিল্লিতে নয়। ভিয়েতনামে যুব উৎসবে। তখন মমতাও যুব কংগ্রেসের নেত্রী।
নুসরত জাহান?
পল্লব হেসে বলেন, ‘‘না, ওঁর সঙ্গে আলাপ নেই।’’ দিল্লিতে থাকলেও বাংলা সিনেমা দেখেন পল্লব। ব্যোমকেশ বক্সি-সিরিজের অনেকগুলিই দেখেছেন। কিন্তু নুসরতের কোনও ছবি দেখা হয়নি। খোকা ৪২০ বা জামাই ৪২০ দেখেছেন? হাসতে হাসতে পল্লবের জবাব, ‘‘না, আমি সেই রাজ কপূরের শ্রী ৪২০ দেখেছিলাম।’’
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও দীর্ঘদিন দলের আন্তর্জাতিক দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সুবাদে ইয়েচুরি পল্লবের অভিন্নহৃদয় বন্ধু। পল্লব প্রার্থী হওয়ার পর দুই বন্ধুর এক দফা আলোচনাও হয়ে গিয়েছে। ইয়েচুরি আশ্বাস দিয়েছেন, সিপিএম পুরো শক্তি দিয়ে তাঁর পাশে থাকবে। এক সময় মনোরঞ্জন শূর, অজয় চক্রবর্তীর মতো সিপিআই নেতা বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন। কিন্তু গত ১০ বছর বসিরহাট তৃণমূলের দখলে। হাজি নুরুল, ইদ্রিশ আলির পর বসিরহাটে এ বার তৃণমূলের তারকা-প্রার্থী। পল্লবের প্রশ্ন, ‘‘সেলিব্রিটিরা বাংলা থেকে সাংসদ হয়ে এসে কি খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যার কথা তোলেন লোকসভায়? গত পাঁচ বছরে লোকসভার রেকর্ড কিন্তু সে কথা বলছে না।’’