ছবি: সংগৃহীত।
অমিত শাহ-র ‘রোড শো’ ঘিরে শুধুমাত্র উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে গণ্ডগোল হয়েছিল। তা হলে রাজ্যের ন’টি লোকসভা কেন্দ্রেরই প্রচার বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বন্ধ করে দেওয়া হল কেন? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যাসাগর কলেজের গণ্ডগোলে মূলত দু’টি দলই জড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ। তা হলে বাকি দলগুলিকে প্রচার থেকে বঞ্চিত করা হল কেন?
নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ভোট প্রচারের সময় ছেঁটে দেওয়ায় এমনই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন কর্তাদের অনেকেই সৌজন্য বজায় রাখতে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে সবিস্তার মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। তবে তাঁদেরও প্রশ্ন, কমিশন কি নিজের ক্ষমতা ঠিক ভাবে কাজে লাগিয়েছে?
শুক্রবারের বদলে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় প্রচার বন্ধ করে দিতে সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মানছেন, ওই অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে সবরকম ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা কীভাবে কাজে লাগানো হবে, তা কমিশনের বিচার-বিবেচনার উপরেই নির্ভর করে বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রাক্তন কর্তারা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরে বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তেই পারে। সাধারণত নির্বাচনের মধ্যে আদালত ভোট পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রচারের সময় ছেঁটে দিয়ে রাজনৈতিক প্রচারের অধিকারে অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’’ যদিও বিশ্বজিৎবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার সবরকম ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।
সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভোট তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত বলেন, ‘‘অনুচ্ছেদ ৩২৪ হল সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া শেষ অস্ত্র। যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট পরিচালনা করতে গিয়ে কমিশন যে কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে। শীর্ষ আদালত বারবার সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে সিলমোহর বসিয়েছে।’’
আজ নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনও নির্দিষ্ট নিয়মের উল্লেখ না করেই প্রচারের সময় ছাঁটাই করেছে। যাঁরা দোষ করেননি, তাঁদেরও প্রচারের সময় ছাঁটাই করে দেওয়া হল।’’ কমিশনের প্রাক্তন কর্তাদের যুক্তি, ৩২৪ অনুচ্ছেদে ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা বিধিবদ্ধ নয়। ফলে কমিশনারেরাই নিজেদের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী সেই ক্ষমতা কাজে লাগান।
রাজ্য সরকারের প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের যুক্তি, ‘‘জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ ধারায় বলা রয়েছে, ভোটগ্রহণ শেষের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন সেই সময়সীমা এগোতে-পিছোতে পারে না। এটা অসাংবিধানিক। সপ্তম দফার ভোটগ্রহণের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারকে জনমানসে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই নির্দেশ জারি হয়েছে।’’
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা যুক্তি, ‘‘জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে বলা রয়েছে, ওই সময়সীমার পরে ভোটের প্রচার করা যাবে না। সেটা প্রার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচন কমিশন তাতে রদবদল করতে পারবে না, এমন কথা বলা নেই। সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। যদি এক সপ্তাহ সময় কমানো হত, তা হলে প্রশ্ন উঠত। যদি একটি দলকে প্রচারের সুযোগ দিয়ে অন্য দলকে বঞ্চিত করা হত, তা হলেও প্রশ্ন উঠত। কিন্তু তা হয়নি।’’