জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের দিন নির্ধারিত হয়েছে আগামী ১২ মে। খাতায় কলমে বাকি রয়েছে প্রায় দু’মাস। তবে তার আগেই আজ, শুক্রবার থেকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভোটারদের সাহস জোগাতে টহল দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। শাসকদল তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে বিরোধীরা আক্রান্ত হলেও পুলিশের তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ করেছিল তারা। তাই এবার প্রায় দু’মাস আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল শুরু হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে আশাবাদী বিরোধীরা। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি ঠিক জায়গায় ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা তাদের তরফেও নজরদারি করা হবে।
পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবারই জেলায় এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছচ্ছে। ওই বাহিনী নন্দীগ্রামে মোতায়েন করা হবে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের দিন নন্দীগ্রাম-২ ব্লকেই গোপালপুর এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন দু’জন সিপিএম কর্মী। এছাড়া, ময়নার বাকচা, তমলুকের শ্রীরামপুর এলাকাতেও পঞ্চায়েত এবং পরবর্তী সময়ে বারবার রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঘটেছে। লোকসভা ভোটে সে রকম কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর আগাম টহলদারিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর টহলদারি নিয়মিত চলছে কি না, তা জানাতে প্রতিদিন বাহিনীর টহলদারির ছবি তুলে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘শুক্রবার জেলায় এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে। তারা রুট মার্চ করবে। তবে কোন এলাকায় রুট মার্চ করবে তারা, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
অন্যদিকে, বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনী ঠিকঠাক জায়গায় টহল দিচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে দলের জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এ জন্য বাহিনীর টহলের ছবি ও তথ্য পাঠাতে হবে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। বিজেপি’র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্য পুলিশ যেভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে বঞ্চিত করেছিল, এবার তা হবে না বলে আশা করছি। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে টহলদারি করতে হবে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি।’’
যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির গলায় শোনা গিয়েছে অন্য কথা। তিনি বলেন, ‘‘আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলেও তার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। কারণ, ওই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করবে রাজ্যের পুলিশ। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোটারেরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ওদের ভূমিকা নিয়েও সংশয় থাকছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থী তথা জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘যে কোনও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে। এটা রুটিনমাফিক ব্যাপার। আমাদের জেলায় মানুষ শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দেন। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আমাদের কোনও উদ্বেগ নেই আর বিরোধীদের উল্লাসের কিছু নেই।’’