বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছেন, সিপিএমের অতীতের ‘হার্মাদ’রাই এখন বিজেপির ‘ওস্তাদ’ হয়েছে। অবিকল সেই ভাবে না হলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিচ্ছেন, বামপন্থী-সহ রাজ্যের মানুষের একাংশের মধ্যে গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সতর্ক-বার্তা, ‘‘এই বিপদ আসতে পারে। কিছু জায়গায় এসেছেও। আমাদেরই দায়িত্ব, এই সর্বনাশা দিক থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা। তৃণমূলের গরম তেলের কড়াই থেকে বিজেপির জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ?’’
এ বারই প্রথম প্রচারে নেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শারীরিক অসুবিধার কারণে গৃহবন্দি। সিপিএমের দলীয় মুখপত্র মারফত বুদ্ধবাবু আবেদন জানিয়েছেন, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং ধান্দাবাজ পুঁজিপতিদের রক্ষার যে ‘মোদী মডেল’ দেশে গড়ে উঠেছে, তাকে ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং স্বাধীন অর্থনৈতিক বিকাশের বিকল্প পথকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লক্ষ্যেই বিজেপিকে পরাস্ত করে কেন্দ্রে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরি করার ডাক দিয়েছেন বুদ্ধবাবু।
তৃণমূলের আমলে রাজ্যে নতুন শিল্প না হওয়া, আইনশৃঙ্খলার হাল নিয়ে বরাবরই সরব ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটের সময়ে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য বদলায়নি। বিজেপির উত্থানের জন্য তৃণমূল যে প্রবল ভাবে দায়ী, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, এই নির্বাচনেও কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে মেরুকরণের আবহ তৈরি করছে পারস্পরিক স্বার্থে।
বামফ্রন্ট সরকারকে যাঁরা দেখেছেন এবং তৃণমূল সরকারকেও দেখছেন, তাঁদের উপরেই পার্থক্য বেছে নেওয়ার ভার ছেড়েছেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘নেই, নেই আর নেই! গ্রামে-শহরে এক অরাজক অবস্থা। বিশেষ করে, তরুণ সমাজের সামনে। তৃণমূল তাদের বিপথে চালিত করছে। শিল্প নেই, কৃষির বিকাশ নেই। তরুণ সমাজকে বলব, নিজেরাই দুই সরকারের পার্থক্য মূল্যায়ন করুন।’’
গণ-আন্দোলনের গতিপথ বুঝে নিজেদের কর্মকৌশল পরিবর্তন করার কথাও বলেছেন বুদ্ধবাবু। সেই চেষ্টা বামপন্থীরা করছেন বলেও তাঁর দাবি। তাঁর আহ্বান, ‘‘ধান্দাবাজদের চৌকিদারকে হটাতেই হবে!’’ সেই সঙ্গেই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল নামক বিপদকে এ রাজ্যে পরাস্ত করুন। না হলে এ রাজ্য বাঁচবে না!’’