অর্জুন সিংহ।
ভাটপাড়ার গোলমালে এ বার প্রাণ গেল এক যুবকের। বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও তিন জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ ইমতিয়াজ (সোনু)।
এর মধ্যেই গ্রেফতার হতে পারেন এই আশঙ্কায় অর্জুন সিংহের আইনজীবীরা বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। অর্জুনকে আগামী ২৮মে পর্যন্ত ‘সুরক্ষা’ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি এম আর শাহ-র বেঞ্চ জানিয়েছে, ২৮ তারিখের মধ্যে অর্জুন নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন না পেলে, রাজ্য পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে।
রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানায়, অর্জুনের বিরুদ্ধে হিংসা, দাঙ্গা করানোর অভিযোগ রয়েছে। অস্ত্র আইনেও মামলা রয়েছে। অর্জুন ভোটের প্রার্থী হিসেবে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, সেখানেও তিনি এ সব তথ্য দিয়েছেন। উল্টো দিকে অর্জুনের আইনজীবী অভিযোগ তোলেন, তিনি দলবদল করার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করছে। অর্জুনের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে জানান, শুধু মে মাসেই ১১টি মামলা হয়েছে।
বিচারপতি অরুণ মিশ্র মন্তব্য করেন, ‘‘যারা দাঙ্গা, অশান্তি, ভাঙচুর করে, তারা কোনও দলের লোক হয় না। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা সেই দলে ভিড়ে যায়।’’ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কড়া মন্তব্য করেছেন বিচারপতি মিশ্র। তিনি একসময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আজ তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে হিংসা সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে। কখনও কখনও মানুষ কোনও কারণ বা বিষয় ছাড়াই মারামারি করে।’’ এর পরে বিচারপতিরা রায় দেন, যেহেতু আইনজীবীদের ধর্মঘট চলছে, তাই আগাম জামিনের আবেদন জানানোর জন্য রক্ষাকবচ দেওয়া জরুরি। ২৮ মে পর্যন্ত কোনও মামলাতেই অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। তার পরে আর এই রক্ষাকবচ থাকবে না।
অর্জুন অবশ্য এ দিনও গোলমালের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, মৃত ইমতিয়াজ মদন মিত্রের লোক। মদনও পাল্টা জানিয়েছেন, মৃত যুবক অর্জুনের লোক। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কাঁকিনাড়ার ৫ নম্বর সাইডিং এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে। একটি পরিত্যক্ত ঘরে কয়েকজন বোমা তৈরি করেছিল। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে জখম হয় চার জন। তাদের মধ্যে তিনজনকে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় বছর বত্রিশের ইমতিয়াজের।
বুধবার নতুন করে করে ভাটপাড়ার কোথাও অশান্তি না হলেও এলাকার পরিস্থিতি একই রকম থমথমে। রাস্তাঘাট সুনসান, মোড়ে মোড়ে পুলিশ, আধাসেনার টহল চলছে। এ দিনও দোকান বাজার খোলেনি। পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে এ দিন ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান খোলার আবেদন করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দেন, তাঁরা দোকান খোলার সাহস পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল দেখেই তাঁরা দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেবেন।
ভাটপাড়ায় অশান্তি করার জন্য অর্জুন মদনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। একটি ভিডিয়ো বার্তায় মদন অর্জুনকে সংযত থাকতে বলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, মদন বলছেন, ‘‘দেখ অর্জুন, ভোট মিটে গিয়েছে। দাদা হিসেবে বলছি, আর অশান্তি করিস না। ভোটে যা যা করার তা করেছিস। মারতে হলে, আমায় মার। বলিস, কোথায় কখন যেতে হবে। আমি হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকব। তবে মারার আগে একটু খাইয়ে নিস।’’