প্রতীকী ছবি।
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরীরকে টানা দু’দশক ধরে দিল্লির সংসদে পাঠানোর কাণ্ডারীদের মধ্যে অন্যতম আবু তাহের খান এ বার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।
কংগ্রেস রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি কলেজ জীবনে। ১৯৯৩ সালে নওদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির তিনিই সভাপতি। ২০০১ সাল থেকে চলতি মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৯ বছর নওদার বিধায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই দলত্যাগ করে তৃণমূলের যাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতিও ছিলেন আবু তাহের।
সেই তাহেরই একদা তাঁর রাজনৈতিক ‘গুরু’ অধীর চৌধুরীর ‘হাত’ ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলের ‘ঘাসফুল’ তুলে নেন। কিন্তু কেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার পর্বের সময় তিনি নওদার আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরে প্রহৃত হয়েছিলেন। তাঁকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করেছেন বলে সেই সময় তিনি নিজেই অভিযোগ করেছিলেন। তার চার মাস পরে ২০১৮ সলে ২১ জুলাই কোন কারণে কংগ্রেস ত্যাগ করে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন? সেই প্রশ্নও নতুন করে উঠেছে লোকসভা ভোটের প্রচার-পর্বে।
আবু তাহেরের ব্যাখ্যা, ‘‘এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধীশক্তির একমাত্র মুখ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই রাজ্যের উন্নয়নের কাণ্ডারী। ওই দু’টি কারণে কংগ্রেস ছেড়ে আমার তৃণমূলে যাওয়া।’’
ওই ব্যাখ্যা পাতে পড়তে দিচ্ছেন না বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ভোটে অধীর চৌধুরীর মনোনীত নির্দল হিসাবে জিতে বিধানসভার চৌকাঠে পা দিয়েছিলেন আবু তাহের। তাঁর মুখে এই সব নীতি কথা মানায় না।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই এ রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত বলে মনোজ চক্রবর্তীর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘একদা বিজেপির জোটসঙ্গী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের রাজনৈতিক পদক্ষেপের কারণে এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তির আমদানি ঘটেছে। তৃণমূলের হাতে মার খাওয়া আবু তাহের নিজের স্বার্থে লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে তৃণমূলে গিয়েছেন।’’
বিধায়ক হয়েও রাজ্যের শাসক দলের দাপটে তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের কোন কাজ করতে পারছিলেন না। প্রশাসনের কাছেও সে ভাবে তিনি পাত্তা পাচ্ছিলেন না বলে জানান জেলা কংগ্রেসের এক নেতা।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় নেই ৪১ বছর। কেন্দ্রের ক্ষমতাতেও বছর পাঁচেক থেকে কংগ্রেস নেই। ফলে আবু তাহেরের মতো কংগ্রেসের বিধায়কদের ঢাল তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতো দশা। ফলে তৃণমূলে না গিয়ে তাঁর সামনে অন্য কোনও পথ খোলা
ছিল না।’’
তৃণমূলে থাকলে ক্ষমতার অলিন্দে থাকার পাশাপাশি আমতলা হাসপাতাল চত্বরে মারধর খাওয়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও কমবে। তাই তাঁর তৃণমূলে যোগদান বলেই জানাচ্ছেন আবু তাহেরের ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক সতীর্থ।