ফের এমনই ভিড়ের অপেক্ষায় দিঘা। ফাইল চিত্র।
অবশেষে চালু হচ্ছে দিঘাগামী লোকাল ট্রেন। আপাতত মেচেদা ও পাঁশকুড়া থেকেই এই ট্রেন চালানো হবে বলে রেল সূত্রে খবর। রাজ্যে করোনার সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে দীর্ঘ আট মাস বন্ধ ছিল সমস্ত লোকাল ট্রেন। আগামী বুধবার থেকে রাজ্যে লোকাল ট্রেন চালানোর যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার এবং রেল।
পুজো, গরমের ছুটি বা শীতকালীন ভ্রমণ— দিঘা বাঙালির হাতের নাগালেই। প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক দিঘায় ভিড় জমান। কিন্তু এ বছর অতিমারি ও লকডাউন পরিস্থিতি বাঙালির ‘পায়ের তলার সর্ষে’কে এক লহমায় ছিনিয়ে নিয়েছে। পর্যটক না পেয়ে দিঘাও যেন কেমন ম্রিয়মান! ‘দিঘা কবে হাসবে’, এই চিন্তাই ঘুরছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক এবং পর্যটনের সঙ্গে জড়িতদের মাথায়। দিঘাগামী লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার খবরে অবশেষে সেই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটতে চলেছে। খুশি পর্যটকরাও।
রেল সূত্রের খবর, পুরনো সূচি মেনেই মেচেদা থেকে দিঘার ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টায়। পৌঁছবে সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে। আবার দিঘা থেকে সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে এবং সেটা মেচেদায় পৌঁছবে দুপুর ২টো ১০ মিনিটে। অন্য দিকে, পাঁশকুড়া থেকে দিঘাগামী ট্রেন ছাড়বে সন্ধে ৭টা ৩৫ মিনিটে। দিঘায় ট্রেনটি পৌঁছবে রাত ১০ টা ৫ মিনিটে। আবার, দিঘা থেকে পাঁশকুড়াগামী লোকাল ট্রেন ছাড়বে সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে। পৌঁছবে ৮টা ৫ মিনিটে।
আরও পড়ুন: ভোটের অনু-টোটকা কী হবে? ‘গোপন মেনু’, বললেন কেষ্ট
দিঘার স্টেশন মাস্টার সন্দীপ কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন, পুজোর আগেই হাওড়া থেকে দিঘা স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এ বার লোকাল ট্রেন চালু হলে সাধারণ যাত্রীদের অনেকটা সুবিধা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘লোকাল ট্রেন চালু হলে বেশ কিছু বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হবে। যেমন, স্টেশন থেকে বেরনোর মুখে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানিং হবে। সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর গোটা ট্রেন স্যানিটাইজ এবং সাফাই করা হবে। সাফাই হয়ে যাওয়ার পর ফের যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হবে।’’
এই খবরে খুশি পর্যটকেরা। দিঘায় বেড়াতে আসা পাইকপাড়ার বাসিন্দা কাজল জানা বলেন, “আমরা বাসে করে দিঘায় এসেছি। লোকাল ট্রেন চালু হলে পর্যটকদের খুব সুবিধা হবে। তা ছাড়া অনেক কম খরচে দিঘায় যাতায়াত করা যাবে।”
শুধু পর্যটকেরাই নন, খুশি ব্যবসায়ীরাও। স্থানীয় ব্যবসায়ী অরবিন্দ দাসের কথায়, “আমরা খুবই আশাবাদী এ বার মন্দার বাজার কাটবে। গত কয়ে কমাস প্রায় কিছুই ব্যবসা হয়নি। এ বার ট্রেন চলাচল শুরু হলে স্বাভাবিক ভাবে পর্যটকের ভিড় জমবে। ফলে ব্যবসায়ীরাও লাভের মুখ দেখবেন।” দিঘার হোটেল ব্যবসায়ী রতন মাইতি বলেন, ‘‘রেলের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। গত কয়েক মাস দিঘায় খুব বেশি পর্যটক আসছিলেন না। সাধারণ পর্যটকরা এ বার নিশ্চিন্তে দিঘায় আসতে পারবেন।’’ পাশাপাশি হোটেল ব্যবসাও লাভের মুখ দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি সুশান্ত পাত্র বলেন, “পুজোর আগে রেলকে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছিল ট্রেন চালু করার জন্য। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য লোকাল চালানো যায়নি। এ বার লোকাল চালু হচ্ছে শুনে খুব ভাল লাগছে। এর জন্য রেলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” কী ভাবে সুরক্ষাবিধি মানা হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুশান্তবাবু বলেন, “ভিড় এড়াতে রেস্তরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। পরিবর্তে হোটেলে পর্যটকদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে করোনা বিধি মেনে হোটেলের ঘরগুলি নিয়মিত স্যানিটাইজ করার দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে।
রামনগর-১ ব্লক এলাকার মধ্যেই রয়েছে দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর। পর্যটকদের আনাগোনার উপর ভিত্তি করেই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভর করে। লোকাল ট্রেন চালু হলে তা ব্যবসায়ীদের পক্ষে লাভজনক হবে বলেই জানালেন ব্লক সভাপতি শম্পা মহাপাত্র।