Maldah

সাড়ে পাঁচশো বছরের পুরনো সেতু রক্ষায় উদ্যোগ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুতপা সিংহ বলেন, ‘‘পুরনো বাদশাহি সড়কের উপরে তৈরি এই সেতুটি মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যশিল্পীদের দক্ষতার এক অনুপম নিদর্শন।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৫৫
Share:

গৌড়ে সুলতানি আমলের সেতু। নিজস্ব চিত্র

সিমেন্টের প্রলেপ পড়েছে। তবুও পাঁচ খিলানের সেতুর দেওয়ালে উঁকি দিচ্ছে সাড়ে পাঁচশো বছর আগের ইট। মালদহের মহদিপুরের লোটন মসজিদ লাগোয়া এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি নতুন রাজধানী শহর পত্তনের ইতিহাসও। তখন লোকলস্কর নিয়ে ওই সেতু পেরিয়ে যাতায়াত করতেন বাংলার স্বাধীন সুলতানেরা। সেতুতে পা পড়েছে শুধু ভারতেরই নয়, চীন সহ এশিয়ার নানা প্রান্তের বণিকদেরও। ইংরেজবাজার থেকে বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্য বন্দর মহদিপুর যাওয়ার রাস্তার উপরেই এই সেতুটি পড়ে বলে এখনও এই সেতু দিয়ে যানবাহন, মানুষের যথেষ্ট চলাচল রয়েছে। কিন্তু সেতুটি সরু হওয়ায় তা বড় করাতে উদ্যোগী হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তাতে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ইতিহাসবিদেরা আপত্তি করেছেন।

Advertisement

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুতপা সিংহ বলেন, ‘‘পুরনো বাদশাহি সড়কের উপরে তৈরি এই সেতুটি মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যশিল্পীদের দক্ষতার এক অনুপম নিদর্শন। সেতুটি তৈরি হয়েছিল পরবর্তী ইলিয়াস শাহি বংশের সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহর আমলে। তিনি তখন গৌড়ে নতুন রাজধানী তৈরি করছিলেন।’’ সুতপা বলেন, ‘‘সেতুটির গায়ে একটি শিলালেখ ছিল, যা থেকে জানা যায়, তা তৈরি হয়েছিল ১৪৫৭ সালে।’’

আমদানি-রফতানিকারকদের দাবি, দৈনিক সাড়ে তিনশো পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে এই সেতু দিয়ে। মালদহের ইংরেজ বাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের লিপিকা বর্মণ বলেন, ‘‘সেতুটি খুবই ব্যস্ত একটা রাস্তার উপরে। কিন্তু ছোট হওয়ায় যানজট হয়। তাই ওটা বড় করতে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছিল।’’ তবে লিপিকার কথায়, ‘‘পরে যখন সেতুটির ঐতিহাসিক মূল্য জানা গেল, তখন সেতুটিকে রক্ষা করার সিদ্ধান্তই হয়েছে।’’

Advertisement

সুতপা জানান, এখনও কর্মক্ষম এত প্রাচীন সেতু পশ্চিমবঙ্গে কেবল মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির মোরগ্রামেই রয়েছে। তবে সেটিও বেশ পরে মুঘল আমলে তৈরি। ওড়িশায় অবশ্য পুরীর কাছে আঠারোনালায় ত্রয়োদশ শতকের একটি সেতু দিয়ে এখনও যাতায়াত করা হয়।

হাওড়ার গঙ্গার উপরে বা সেবকে তিস্তার উপরে তৈরি সেতুর বয়স যেখানে একশো বছরেরও কম, সেখানে পাথর ও ইট দিয়ে তৈরি গৌড়ের সেতুটি রক্ষা করা কর্তব্য বলে মনে করেন এলাকার বাসিন্দারাও। দীপাঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘এই সেতুটি সহ গৌড়ের সব মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সাবুর আলি, কেদারনাথ গুপ্তর মতে, প্রশাসনের উচিত সেতুটি ইতিহাসবিদ্‌দের পরামর্শ নিয়ে সংস্কার করা।

সব কথা শোনার পরে মহদিপুরের এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষও বলেন, “আমরাও চাই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখে উন্নয়ন হোক।” এই পরিস্থিতিতে মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলছেন, “সেতুটির বিষয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেতুটিতে বাঁচিয়ে সংস্কারের বিকল্প পথ কমিটি খুঁজে দেখছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement